মার্কিন মধ্যস্থতায় হামাস ও ইজরায়েল অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন 'গাজায় যুদ্ধ শেষ'। শুক্রবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকেই গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরতে শুরু করে ইজরায়েলি সেনা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক তদন্ত কমিশন এর আগে জানিয়েছিল, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা উপত্যকায় ফিরতে শুরু করেছেন নিজেদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ির খোঁজে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে ঘরবাড়ি প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকার সম্ভাবনা নেই জেনেও হাঁটছেন তাঁরা। পিঠে নিজেদের অবশিষ্ট সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে পায়ে হেঁটে কেউ কেউ ২০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছেন।
১০ অক্টোবর (শুক্রবার) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই নিজেদের শেষ সম্বলটুকু ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। এঁরা সকলেই দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার ঘরে ফেরার পালা। তবে যাঁরা বাড়িতে ফিরেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা বড়ই বেদনাদায়ক। চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাড়ি অবশিষ্ট আছে। রাষ্ট্রসংঘের মতে গাজাতে প্রায় ৯০ শতাংশ পরিকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে।
উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছেন জামাল মেসবাহ। তিনি জানান – “যুদ্ধবিরতি আমাদের কাছে এমন কিছু আনন্দের নয়। আপাতত আমাদের মৃত্যু ও রক্তপাতের যন্ত্রণা কিছুটা কমেছে মাত্র।”
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে, ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরে এসে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর বিশেষ কিছু খুঁজে পাননি। খান ইউনিস থেকে বাস্তুচ্যুত ফাতমা রাদওয়ান জানিয়েছেন – “কিছুই অবশিষ্ট নেই। কেবল কয়েকটি কাপড়, কাঠের টুকরো এবং হাঁড়ি পড়ে আছে। মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।” হানি ওমরানও খান ইউনিস থেকেও বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। তিনি বলেন - “আমরা এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছি যেখানে কিছুই চিহ্নিত করা যাচ্ছে না ... সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ।”
প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক শর্ত হিসাবে হামাস নিজেদের কব্জায় থাকা অবশিষ্ট ৪৮ জন ইজরায়েলি পণবন্দীকে মুক্ত করতে রাজি হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এরমধ্যে ২৮ জন পণবন্দী মৃত এবং জীবিত ২০ জন। হামাসের দাবি – ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর লাগাতার বোমা বর্ষণের ফলেই ওই ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উল্টোদিকে, ইজরায়েল প্রায় ২০০০ জন ফিলিস্তিনিকে জেলমুক্তি দেবে বলে সম্মত হয়েছে। এরমধ্যে নাবালক এবং মহিলাও আছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে শুক্রবার ইজরায়েল যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা মারওয়ান বারঘৌতির নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ইজরায়েল তাঁকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে - গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে রয়েছে হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজাকে সামরিক শক্তিমুক্ত করা। তবে হামাস এখনও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন – “পরবর্তী ধাপের লক্ষ্য হল হামাসকে নিরস্ত্র করা। যদি সহজ উপায়ে এটা হয় - তাহলে তাই হোক। যদি না হয় - তবে কঠিন উপায়েই লক্ষ্য পূরণ করা হবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন