গাজায় প্যালেস্তিনিয়দের গণহত্যা করেছে ইজরায়েল। রাষ্ট্রসংঘের এক তদন্ত কমিশন একথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত রিপোর্টে ইজরায়েলি নেতৃত্বের বিবৃতি এবং ইজরায়েলি বাহিনীর আচরণের ধরণকে গণহত্যার অভিপ্রায়ের প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ইজরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশমন্ত্রী জিডিওন সার (Gideon Saar) এই রিপোর্ট খারিজ করে জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট "বিকৃত এবং মিথ্যা"।
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন প্যানেল “যুক্তিসঙ্গত ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং ইজরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গাজায় প্যালেস্তিনিয়দের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে"।
কমিশনের সদ্য প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সংজ্ঞায়িত পাঁচটি গণহত্যার মধ্যে চারটি ঘটনা ২০২৩ সালে হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংঘটিত হয়েছে। যার মধ্যে আছে একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা, তাদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করা, ইচ্ছাকৃতভাবে গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত পরিস্থিতি তৈরি করা এবং জন্ম রোধ করা।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২৩-এ প্যালেস্তাইনের ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজায় মৃত্যু হয়েছে ৬৪,৯৬৪ জনের। এই তথ্যকে মান্যতা দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের তদন্ত কমিশন।
কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে, গাজার ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পানীয় জল, নিকাশী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এর আগেই রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য নিরপত্তা বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে বলে জানান হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতিত্ব করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান এবং রোয়ান্ডার গণহত্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সভাপতি নাভি পিল্লাই। অন্য দুই সদস্য হলেন অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী ক্রিস সিডোটি এবং আবাসন ও ভূমি অধিকার বিষয়ক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ মিলুন কোঠারি।
কমিশনের চেয়ারম্যান নাভি পিল্লাই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "আজ, আমরা বাস্তব সময়ে দেখতে পাচ্ছি 'আর কখনও নয়'-এর প্রতিশ্রুতি কীভাবে বিশ্বের চোখের সামনে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। গাজায় চলা গণহত্যা একটি নৈতিক অবমাননা এবং আইনি জরুরি অবস্থা। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত কর্তৃক এটিকে গণহত্যা ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষা করার কোনও প্রয়োজন নেই। গণহত্যা রোধ করার জন্য সমস্ত রাষ্ট্র তাদের ক্ষমতার মধ্যে যেকোনো উপায় ব্যবহার করতে বাধ্য। তাই আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে যে কোনও অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এবং আগামীদিনে আরও অপরাধ সংঘঠিত হওয়া রোধ করতে। যা শুধুমাত্র গাজায় নয়, সমগ্র অধিকৃত প্যালেস্তিনিয় ভূখণ্ডেই নিশ্চিত করতে হবে।”
অন্যদিকে, মঙ্গলবারই গাজা শহরে স্থল আক্রমণ শুরু করেছে ইজরায়েল। এই আক্রমণ প্রসঙ্গে প্যালেস্তিনিয়রা জানিয়েছে "গাজা জ্বলছে" এবং যুদ্ধের গত দুই বছরের মধ্যে এদিনই তাঁরা সবচেয়ে তীব্র বোমাবর্ষণের মুখোমুখি হয়েছে।
ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, স্থল সেনারা প্রধান শহরের আরও গভীরে প্রবেশ করেছে এবং আগামী দিনে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী মনে করে শহরে এখনও ৩,০০০ হামাস যোদ্ধা আছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন