ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হলেন গ্রেটা থুনবার্গ (Greta Thunberg)। গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে সুইডেনের পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে এদিন আটক করা হয়। সমুদ্রতীর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে তাঁর জাহাজ আটক করা হয়। একাধিক ছোটো জাহাজে করে (Flotilla Ships) তাঁরা গাজায় যাচ্ছিলেন। যেখানে গ্রেটা থুনবার্গ-এর জাহাজই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। মোট ৪৪টি ছোটো জাহাজে করে ৫০০-র সমাজকর্মী গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন।
গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করার পর বুধবার ইজরায়েলি বিদেশ মন্ত্রক এই বিষয়ক এক ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, গ্রেটা এবং তাঁর সহযোগীরা নিরাপদে ও সুস্থ আছেন। শুক্রবার এই নৌবহরে থাকা শেষ জাহাজটিও আটক করেছে ইজরায়েলি বাহিনী। এক এক্স বার্তায় (পূর্বতন ট্যুইটার) একথা জানিয়েছে গ্লোবাল সামাড ফ্লোটিলা কমেন্ট্রি (GSF)।
ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হবার পর এক বিবৃতিতে সমাজকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও আইন ভাঙেননি। বরং ইজরায়েল গাজাতে খাদ্য পৌঁছানো আটকে দিয়ে অনাহারকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সমস্ত দেশের কাছে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আবেদন জানানো হয়েছে।
গ্রেটা-দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইজরায়েলি বাহিনী বেআইনি ভাবে ফ্লোটিলার যাত্রাপথ রুদ্ধ করেছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, একটি জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্যান্য জাহাজগুলিতে জলকামান দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা এই ঘটনার লাইভ স্ট্রিমিং করছিলেন তাঁদের ভিভাইসকেও অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইজরায়েলের ত্রাণ জাহাজ আটক ক্রাকে "আন্তর্জাতিক আইন এবং মৌলিক মানবতার উপর আক্রমণ" বলে জানিয়েছে।
ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর দলের অন্যান্য সদস্য আটক হবার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। এথেন্স, রোম, বার্লিন, ব্রাসেলস, টিউনিস, আঙ্কারা প্রভৃতি জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে সাধারণ মানুষ।
ইতালির সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন ফ্লোটিলার প্রতি সহমর্মীতা জানিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যে থেকেই রোম, তুরিন, ফ্লোরেন্স, পিসায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফ্লোটিলা আটকের পর ছয় মেক্সিকান নাগরিক ইজরায়েলের হেফাজতে আছেন। গত তিন দিনে মেক্সিকো ইজরায়েলকে চারটি কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে, যাতে নৌবহরে থাকা মেক্সিকানদের নিরাপত্তা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো নেতানিয়াহুর এই বাধাকে "আন্তর্জাতিক অপরাধ" বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন তিনি তার দেশ থেকে ইজরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করবেন। পাশাপাশি তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজার শান্তি পরিকল্পনা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১০ সালে গাজায় এভাবেই নৌবহরের মাধ্যমে ত্রাণ নিয়ে যাবার সময় ইজরায়েলি বাহিনী সেই নৌবহরে ড্রোন হামলা চালায় এবং যে ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়। যারা সকলেই তুর্কির নাগরিক ছিলেন। ওই ঘটনায় আহত ১ ব্যক্তি চার বছর কোমায় থাকার পর ২০১৪ সালে মারা যান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন