
আরও একটা বছর শেষ হতে চললো। সুখ-দুঃখ সমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই পৃথিবীর বয়স বাড়লো আরও এক বছর। ২০২৪-এ আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া ভারতের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
ডঃ মনমোহন সিং
গত ২৬ ডিসেম্বর রাত ৯.৫১ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডঃ মনমোহন সিং। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২। তাঁর প্রয়াণে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই সময় দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সরকারি স্তরে কোনও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হবে না।
শ্যাম বেনেগাল
২৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হন অন্য ধারার চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। বহু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কিডনি সংক্রান্ত সমস্যাও ছিল পরিচালকের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
রাজা মিত্র
গত ২০ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় চলচ্চিত্র পরিচালক রাজা মিত্রের। নভেম্বর মাসে ক্যানসার ধরা পড়েছিল তাঁর। ১ মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানেন তিনি।
উস্তাদ জাকির হুসেন
১৫ ডিসেম্বর স্তব্ধ হয় তবলায় জাদুস্পর্শ। প্রয়াত উস্তাদ জাকির হুসেন। আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোর এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ
গত ১০ ডিসেম্বর দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সোমানহাল্লি মাল্লাইয়া কৃষ্ণ প্রয়াত হন। ব্যাঙ্গালোরে নিজের বাড়িতে মৃত্যু হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। এসএম কৃষ্ণের আমলেই ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে ব্যাঙ্গালোরের নাম উঠে আসে বিশ্ব মানচিত্রে।
উমা দাশগুপ্ত
গত ১৮ নভেম্বর প্রয়াত হন ‘পথের পাঁচালি’র ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্ত। বহু দিন ধরেই মারণ রোগ ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও নতুন করে ফের শরীরে বাসা বাঁধে ক্যানসার। চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভর্তি করানো হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পথের পাঁচালি’তে অপুর দিদি ‘দুর্গা’ চরিত্রে অভিনয় করেন উমাদেবী। ‘দূর্গা’ চরিত্রকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন তিনি। যদিও এর পর আর কোনও দিনও পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে। পেশাগত ভাবে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক।
মনোজ মিত্র
১২ নভেম্বর প্রয়াত হন প্রবীণ নাট্যকার ও পরিচালক মনোজ মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। কলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মনোজ মিত্র। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন প্রবীণ নাট্যকার।
দেবরাজ রায়
গত ১৭ অক্টোবর প্রয়াত হন টলিউড অভিনেতা দেবরাজ রায়। এক সময় টেলিভিশনে খবর পড়তেন তিনি। পরে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করেন। মৃত্যুকালে অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
বাবা সিদ্দিকি
২০২৪ সালে ভারতীয় রাজনীতিতে অন্যতম বড় এবং দুঃখজনক ঘটনা হল এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির হত্যা। গত ১২ অক্টোবর বান্দ্রায় ছেলে জিশান সিদ্দিকির দফতরের বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকির।
রতন টাটা
৯ অক্টোবর ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের প্রথম সারির অন্যতম শিল্পপতি রতন টাটা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
সীতারাম ইয়েচুরি
চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে প্রয়াত হন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সীতারাম ইয়েচুরিকে ১৯ আগস্ট এইমস-এ ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তাঁকে ফেরানো যায়নি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
উৎপলেন্দু চক্রবর্তী
চলতি বছর ২০ আগস্ট নিজের বাসভবনে প্রয়াত হন চলচ্চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। ভুগছিলেন প্রস্টেট এবং সিওপিডি-র সমস্যায়। মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ নিয়েছিলেন ২০০০ সালে। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
যামিনী কৃষ্ণমূর্তি
গত ৩ আগস্ট প্রয়াত হন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী মুঙ্গারা যামিনী কৃষ্ণমূর্তি। ১৯৬৮ সালে 'পদ্মশ্রী' এবং ২০০১ সালে 'পদ্মভূষণ' পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
অংশুমান গায়কোয়াড়
গত ৩১ জুলাই প্রয়াত হন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার অংশুমান গায়কোয়াড়। ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ২২ বছরের ক্রিকেটজীবনে দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন ১৫টি।
বিশ্বনাথ চৌধুরী
রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী ছিলেন বিশ্বনাথ চৌধুরী। ক্যানসার তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গত ২৭ জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। ৮৩ বছর বয়সেই পথ চলা শেষ হয় বাম আমলের মন্ত্রীর। টানা ৭ বার বালুরঘাট থেকে আরএসপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
পার্থসারথী দেব
২০২৪ সালের ২২ মার্চ প্রয়াত হন টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা পার্থসারথী দেব। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল তাঁর। তারপর নিউমোনিয়া ধরা পড়ায় পুরো বুকে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছিল। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
পঙ্কজ উধাস
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় সঙ্গীত শিল্পী পঙ্কজ উধাসের। মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই সঙ্গীত শিল্পী। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।
অঞ্জনা ভৌমিক
১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০। মূলত ছোটদের জন্য ছড়া লিখতেন কবি ভবানী প্রসাদ মজুমদার। একবিংশ শতকের বাঙালি ছড়াকারদের মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছেন তিনি। ২০ হাজারেরও বেশি ছড়া প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।
শ্রীলা মজুমদার
ক্যানসারের সাথে লড়াই করে হার মানেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। চলতি বছরের শুরুতে ২৭ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
মুনাওয়ার রানা
১৪ জানুয়ারি লখনউয়ের এক হাসপাতালে ৭১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন উর্দু কবি মুনাওয়ার রানা। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কলকাতায় কাটিয়েছেন। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি কবি উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন। তাঁর কন্যা সুমাইয়া বর্তমানে অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সদস্য। ২০১৪ সালে মুনাওয়ার রানা তাঁর কবিতার বই 'শাহদাবা'-এর জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
উস্তাদ রাশিদ খান
২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি সঙ্গীত শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খানের মৃত্যু হয়। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন