নিজেদের কর্মী সংখ্যা আরও কমানোর পথে হাঁটতে চলেছে ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL)। সংস্থার কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর (VRS) প্রকল্প আনার জন্য ইতিমধ্যেই দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DoT) এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রকের কাছে অনুমোদন চাইবার কথা ভাবনা চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। এই পরিকল্পনা আনা হলে তা হবে স্বেচ্ছাবসর-এর দ্বিতীয় পরিকল্পনা।
ইকনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নিজেদের কর্মীসংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ কমাতে চাইছে এই টেলিকম অপারেটার সংস্থা। যা সংখ্যায় প্রায় ১৮ থেকে ১৯ হাজার। সংস্থার বক্তব্য, এই কর্মীসংখ্যা কমানো হলে সংস্থার আর্থিক হাল ফিরবে।
জানা গেছে, স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে অর্থমন্ত্রকের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকা চাইবে বিএসএনএল। এই স্বেচ্ছাবসরে কর্মী সংখ্যা কমে গেলে বিএসএনএল-এর বার্ষিক বেতনের অঙ্ক ৭,৫০০ কোটি থেকে কমে ৫,০০০ কোটি হবে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই বিএসএনএল বোর্ড এই পরিকল্পনায় সবুজ সংকেত দিয়েছে। অর্থমন্ত্রকের অনুমোদন পাওয়া গেলে এই বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রক মন্ত্রীসভার অনুমোদন চাইবে। যদিও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে এবং এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
২০২৪ আর্থিক বছরে বিএসএনএল-এর আয় ২১,৩০২ কোটি টাকা। যা গতবছরের তুলনায় সামান্য বেশি। বর্তমানে এই সংস্থায় কর্মরত ৫৫ হাজার কর্মী। যাদের এক্সিকিউটিভ এবং নন-এক্সিকিউটিভ – এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালেও স্বেচ্ছাবসর পরিকল্পনা এনেছিল বিএসএনএল ও এমটিএনএল। সেবার প্রায় ৯৩ হাজার কর্মী স্বেচ্ছাবসর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরপরেও ২০২২ এবং ২০২৩-এও স্বেচ্ছাবসরের পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, বিএসএনএল-এর অপারেশনাল প্রফিট ২০২১-এর অনুপাতে বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। পাশাপাশি সংস্থার খরচ কমেছে ২ শতাংশ।
তথ্য অনুসারে, ৩১ মার্চ ২০১৯-এ বিএসএনএল-এ কর্মী সংখ্যা ছিল ১.৬৭ লক্ষ এবং এমটিএনএল-এ ২১ হাজার।
২০২৩-এর ২৮ জুলাই রাজ্যসভায় সুশীল কুমার মোদীর করা এক প্রশ্নের উত্তরে টেলিকম দপ্তরের তৎকালীন রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবুসিং চৌহান জানান ২০১৯ ভিআরএস স্কিমে ৭৮,৩২৩ জন কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন। এই কর্মীদের বকেয়া ক্ষতিপূরণের জন্য খরচ হয় ১৩,৫৪২.০৫ কোটি টাকা। ওই সময় এমটিএনএল থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন ১৪,৩৭৮ জন কর্মী।
ওইসময় বিএসএনএল চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি কে পুরওয়ার জানিয়েছিলেন, তথ্য অনুসারে ৭৮,৩০০ জন কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন এবং ৬ হাজার জন অবসর নিয়েছেন। যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আমরা মোট ৮২ হাজার কর্মী কমাতে চাই।
অপর সংস্থা এমটিএনএল-এর চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল কুমার ওই সময় জানান, ১৪,৩৭৮ জন কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩,৬৫০ জন কর্মী কমানো। যা কমানো গেলে আমাদের বার্ষিক বেতনের বিল ২,২৭২ কোটি টাকা থেকে কমে ৫০০ কোটি হবে। বর্তমানে আমাদের কর্মী সংখ্যা ৪,৪৩০ জন। যা আমাদের কাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন