
প্রয়াত প্রবীণ নাট্যকার মনোজ মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মঙ্গলবার সকাল ৮ টা ৫০ মিনিট নাগাদ কলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মনোজ মিত্র। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন প্রবীণ নাট্যকার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, মনোজ মিত্রের হৃদযন্ত্র সঠিভাবে কাজ করছে না। নিয়ন্ত্রণে নেই রক্তচাপও। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যতাও ছিল না। প্রবীণ নাট্যকারের চিকিৎসার জন্য গঠিত হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ডও। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মঙ্গলবার প্রবীণ নাট্যকারের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁর ভাই সাহিত্যিক অমর মিত্র।
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনোজ মিত্র। ১৯৫৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় থেকেই নাটকে যুক্ত হন তিনি। সেই সময় নাটকের মঞ্চে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাদল সরকার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তরা। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান তিনি। শুরু করেন গবেষণাও।
১৯৫৭ সালে নাটকে অভিনয় শুরু করেন মনোজ মিত্র। এরপর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। তার আগে বিভিন্ন কলেজে দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন মনোজ মিত্র।
মনোজ মিত্রের লেখা প্রথম নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’। ১৯৫৯ সালে তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু ১৯৭২-সালে ‘চাক ভাঙা মধু’ নাটকের মাধ্যমে তাঁর খ্যাতি এবং পরিচিতি বাড়ে। ওই নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিভাস চক্রবর্তী। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যগোষ্ঠীর নাম ‘সুন্দরম’। মাঝে ‘সুন্দরম’ ছেড়ে ‘ঋতায়ণ’ নামে এক দল গড়লেও কিছু দিনের মধ্যে ‘সুন্দরম’-এই ফিরে আসেন। ‘অবসন্ন প্রজাপতি’, ‘নীলা’, ‘মৃত্যুর চোখে জল’, ‘সিংহদ্বার’, ‘ফেরা’-র মতো একাধিক দর্শক সমাদৃত নাটকের সঙ্গে জুড়েছিল মনোজের নাম।
শুধু নাটকের মঞ্চেই নন সিনেমার জগতেও বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন মনোজ। ১৯৭৯ সালে তিনি সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘গণশত্রু’ এবং ‘ঘরে বাইরে’-তেও অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া মূল ধারার সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবিতে তাঁর অভিনয় এখনও স্মরণীয়। তপন সিংহ, তপন মজুমদার, বাসু চট্টোপাধ্যায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মনোজ মিত্র।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মনোজ মিত্র। কিন্তু এবার আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন