Delhi Polls: 'স্বখাত সলিলে' ডুবলেন কেজরিওয়াল - আপ-কংগ্রেসের মিলিত ভোট বেশি হয়েও বিজেপির কাছে হার

People's Reporter: এই পরাজয় আসলে কেজরি ও তাঁর দলবলের গোঁয়ার্তুমির রাজনীতির ফল। এই ফলাফলের পর আগামী দিনে আম আদমি পার্টির অস্তিত্ব সংকটে পড়লে তার কিন্তু পুরোপুরিই বর্তাবে কেজরিওয়াল, সিসোদিয়াদের ওপর।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধী ও মনীশ সিসোদিয়া
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধী ও মনীশ সিসোদিয়াফাইল ছবি, গ্রাফিক্স - আকাশ
Published on

এ যেন অনেকটা সেই ‘স্বখাত সলিলে ডুবে’ মরা। দিল্লির বুকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজপাটের আপাত শেষটা খুব একটা ভালো হল না। যার পেছনে বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতি যতটা না দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী বোধহয় অরবিন্দ কেজরিওয়াল স্বয়ং এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্ত। নির্বাচনী ফলাফলেই প্রমাণ হয়ে গেছে যে শুধু কেজরি নন, পরাজয় ঘটেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের প্রায় সকলের। যা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কারণে হয়েছে ভাবলে ভুল ভাবা হবে। বরং এই পরাজয় আসলে কেজরি ও তাঁর দলবলের গোঁয়ার্তুমির রাজনীতির ফল। এই ফলাফলের পর আগামী দিনে আম আদমি পার্টির অস্তিত্ব সংকটে পড়লে তার দায় কিন্তু পুরোপুরিই বর্তাবে কেজরিওয়াল, সিসোদিয়াদের ওপর।

৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিজেপি জয়ী হতে চলেছে ৪৮ আসনে এবং আম আদমি পার্টি ২২ আসনে। কংগ্রেস এবারেও শূন্য। এই ফলাফলের খুব একটা হেরফের আর হওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ ২০২০-র ৬২ আসনের জায়গায় কেজরির আপকে দিল্লির মানুষ এবার নামিয়ে দিয়েছে ২২ আসনে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ১৪ আসন কম। অন্যদিকে বিজেপি পেতে চলেছে ৪৮ আসন বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ১২ আসন বেশি। অর্থাৎ এই মুহূর্তে কেজরির দল না ভাঙিয়েও নিশ্চিন্তে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে বিজেপি। তবে আগামী দিনে কেজরির শক্তিক্ষয় করতে আপ ভাঙা হবে কিনা তা ভবিষ্যৎই বলবে। কারণ বিজেপির সৌজন্যে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীদের দল ভাঙিয়ে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করার একাধিক নজির হাতের সামনেই আছে।

আসনের নিরিখে বিজেপির সঙ্গে আপের পার্থক্য ২৬ আসনের হলেও ভোট শতাংশের হারে কিন্তু সেই পার্থক্য একেবারেই নেই। বরং কংগ্রেস এবং আপ যদি সমঝোতার রাস্তায় হেঁটে নির্বাচনে লড়তে নামতো সেক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল কী হত তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারতো না। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ৪৫.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪৮ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে আপ পেয়েছে ৪৩.৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে ২২ আসনে। অর্থাৎ, প্রধান দুই পক্ষের ভোট শতাংশের পার্থক্য ২.০৩ শতাংশের। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৪৩,১৯,৯৯৩ এবং আপ-এর প্রাপ্ত ভোট ৪১,২৭,২১৭। দুই পক্ষের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১,৯২,৭৭৬। বিষয়টাকে এভাবেও দেখা যেতে পারে যে, দিল্লির ৭০টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে আম আদমি পার্টির তুলনায় বিজেপি প্রায় ২ হাজার ৭৫৩-র কিছু বেশি ভোট পেয়েছে।

কিন্তু আম আদমি পার্টির কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলবল যদি প্রথম থেকে বিষয়টাকে অন্যভাবে ভাবতে পারতেন সেক্ষেত্রে তাদের হয়তো ক্ষমতাচ্যুত হতে হত না। ২০২০তে দ্বিতীয়বার ৬২ আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফেরার পর আপের মধ্যে যে স্বেচ্ছাচারিতা বা যে পরিবর্তন এসেছিল তা নাহয় বাদ দেওয়া যাক। বাদ দেওয়া যাক আপ-এর নিজেদের অপরাজেয় ভেবে নেওয়াকেও। যদিও এর ফলে আপ-এর বেশ কিছু কাজ সাধারণ মানুষের বিরক্তির উদ্রেক করেছে। আপ-এর সঙ্গে তাদের দূরত্ব বেড়েছে। কিন্তু এসবের ওপরেও ইন্ডিয়া মঞ্চের শরিক হয়েও বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আপ যেভাবে কংগ্রেস বিরোধিতা করেছে তা সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। বিশেষ করে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে আপ-এর কংগ্রেস বিরোধিতা বিজেপির জয়ের পথ সুগম করেছে তাতে সন্দেহ নেই। এর আগে একাধিক রাজ্যে আপ এভাবেই নিজের নাক কেটে বিরোধী জোটকে দুর্বল করেছে।

একটু সরল অঙ্কের হিসেবে হরিয়ানার ফলাফলের বিচার করা যেতে পারে। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে ৯০ আসনে বিজেপি এবং কংগ্রেসের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ছিল যথাক্রমে ৩৯.৯৪ এবং ৩৯.০৯ শতাংশ। যেখানে আপ পায় ১.৭৯ শতাংশ ভোট। বলা বাহুল্য হরিয়ানা জয়ে কংগ্রেসের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আপ। তাই বিজেপির ৫৫,৪৮,৮০০ ভোটের (৪৮ আসন) বিরুদ্ধে ৫৪,৩০,৬০২ ভোট (৩৭ আসন) পেয়েও জয়ী হতে পারেনি কংগ্রেস। আপ পেয়েছিল ২,৪৮,৪৫৫ ভোট। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং আপের ভোট একত্রিত হলে (৫৬,৭৯,০৫৭) তা বিজেপির মোট প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি হত এবং সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা ছিল।

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ৬.৩৫ শতাংশ ভোট। কোনও আসন পায়নি। ফলে এক্ষেত্রেও নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করা ছাড়া কংগ্রেস বিশেষ কিছু করেনি। কংগ্রেস যে ৬,০১,১৩৮ ভোট পেয়েছে সেই ভোট আম আদমি পার্টির ভোটের সঙ্গে যুক্ত হলে তা বিজেপির প্রাপ্ত মোট ভোটকে ছাপিয়ে যেত এবং আপ কংগ্রেসের মোট ভোট দাঁড়াত ৪৭,২৮,৩৫৫। যা বিজেপির ৪৩,১৯,৯৯৩ ভোটের চেয়ে ৪,০৮,৩৬২ বেশি। সেক্ষেত্রে একধাক্কায় আপের আসন যে বেশ কিছু বেড়ে যেত তাতে সন্দেহ নেই। আগের বারের ৬২ ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু ছিল না।

  • দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে ৭টি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ৩৯২ থেকে ৩,১৮৮ ভোট।

  • মণীশ সিসোদিয়ার জঙ্গপুরা কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান ৬৭৫ ভোট। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৭,৩৫০।

  • মালব্যনগর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সতীশ উপাধ্যায় জয়ী হয়েছেন ২,১৩১ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৬,৭৭০।

  • রাজিন্দর নগর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী উমঙ্গ বাজাজ জয়ী হয়েছেন ১,২৩১ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৪,০১৫।

  • সঙ্গম বিহার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী চন্দন কুমার চৌধুরী জয়ী হয়েছেন ৩৪৪ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ১৫,৮৬৩।

  • তিমরপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সূর্য প্রকাশ ক্ষত্রী জয়ী হয়েছেন ১১৬৮ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৮,৩৬১।

  • ত্রিলোকপুরী কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রবিকান্ত ৩৯২ ভোটে জয়ী। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৬,১৪৭।

  • গ্রেটার কৈলাস কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ৩,১৮৮ এবং কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৬,৭১১।

  • মেহেরৌলি কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হয়েছে ১,৭৮২ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৯,৭৩১।

  • এমনকি আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল যে নিউ দিল্লি কেন্দ্রে ৪,০৮৯ ভোটে হেরেছেন সেই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৪,৫৬৮।

তবে এ সবই সম্ভাবনা। আপ কংগ্রেস সমঝোতা হলে ফলাফল এরকমই যে হত তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। নাও হতে পারতো। যদিও সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে জোট রাজনীতি। বেশ কিছুটা অঙ্ক কষেই জোট তৈরি করা হয়। তাই দিল্লির ক্ষেত্রে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যেকার বোঝাপড়ার অভাব এবং দুই পক্ষেরই অনমনীয় মনোভাব দেশের বিরোধী জোটেরই ক্ষতি করে বিজেপির জয়ের পথ মসৃণ করেছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধী ও মনীশ সিসোদিয়া
Delhi Poll Results: 'পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে দিল্লী', আপের পরাজয়ে মন্তব্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধী ও মনীশ সিসোদিয়া
Delhi Assembly Polls: 'বিকাশের জয়, সুশাসনের জয়' - দিল্লিতে আপ পর্যুদস্ত হতেই বার্তা মোদীর

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in