
• বোয়িং সংস্থায় দীর্ঘ ৩২ বছর কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন জন বার্নেট।
• বোয়িং ৭৮৭ বিমান নির্মাণে গুণমানের সঙ্গে আপোষ করা হয় বলে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন।
• অবসরের পর তিনি বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন।
• ২০২৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। যে মৃত্যু রহস্যাবৃত বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
জন বার্নেটের (John Barnett) নাম আমাদের অনেকেরই অজানা। আজ আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার পর আবারও সার্চ ইঞ্জিনে ভেসে উঠেছেন বার্নেট। কারণ জন বার্নেটকে বোয়িং ৭৮৭-এর অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির বিষয়ে হুইসেল ব্লোয়ার (Whistleblower) বলা হয়। সেই জন বার্নেট, যিনি ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণের আগে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কাজ করেছিলেন বোয়িং সংস্থায়। ২০২৪-এর ৯ মার্চ যার মৃত্যু হয় এবং যা এখনও রহস্যাবৃত। কিন্তু বার্নেট কেন আজ আবার আলোচনায়?
আমেরিকান সংস্থা বোয়িং-এর দক্ষ কর্মী ছিলেন বার্নেট। ২০১০ সাল থেকে তিনি সংস্থার কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন বোয়িং-এর সাউথ ক্যারোলিনার নর্থ চার্লসটন প্ল্যান্টে। যেখানে তৈরি হত ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। যে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার আজ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
২০১৯ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বার্নেট অভিযোগ করেছিলেন, বোয়িং সংস্থার কর্মীদের বিমান তৈরির সময় গুণমানে অনুন্নত যন্ত্রাংশ লাগাতে বাধ্য করা হত। তাঁর অভিযোগ ছিল অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে। তিনি জানিয়েছিলেন, জরুরি অবস্থার সময় প্রতি চারটির মধ্যে একটি অক্সিজেন মাস্ক ঠিকভাবে কাজ করেনা।
বার্নেট জানিয়েছিলেন, অক্সিজেন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হলে, বিমানের আরোহীরা দ্রুত অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ৩৫,০০০ ফুট (১০,৬০০ মিটার) উচ্চতায় এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের অজ্ঞান হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ৪০,০০০ ফুট উচ্চতায়, যা ঘটতে পারে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে। যার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
বিবিসিকে ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, দক্ষিণ ক্যারোলিনায় কাজ শুরু করার পরপরই তিনি দেখেছিলেন যে নতুন বিমান তৈরির ডেডলাইন রাখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে যন্ত্রাংশ লাগানো হয় এবং বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করা হয়। যদিও কোম্পানি এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
বার্নেট জানিয়েছিলেন, কখনও কখনও উৎপাদন সময়মত শেষ করার জন্য স্ক্র্যাপ বিন থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ নিয়ে বিমানগুলিতে লাগানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনি এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বার্নেটের আনা অভিযোগ বোয়িং সংস্থা অস্বীকার করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) তাঁর কিছু অভিযোগের মান্যতা দেয় এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর স্বাস্থ্যজনিত কারণে বার্নেট অবসর গ্রহণ করেন এবং সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পথে অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ ছিল, বোয়িং সংস্থার সঙ্গে তাঁর বিরোধের কারণে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং যার ফলে তাঁর ক্যারিয়ার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কারণ বোয়িং তাঁর কোনও অভিযোগকেই মান্যতা দেয়নি।
ঘটনাচক্রে, বার্নেট যেদিন মারা যান সেদিন তিনি চার্লসটনে এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়েই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছিলেন। বলা হয়, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও বার্নেটের পরিবার এই দাবি মানতে অস্বীকার করে।
সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বার্নেটের পরিবার তাঁর মৃত্যুর এক বছর পর ২০২৫-এর মার্চ মাসে বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের দাবি, বোয়িং সংস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে বার্নেটের অভিযোগ ভুল বলে, তাঁর পারফরম্যান্স রেটিং খারাপ দেয় এবং কম পছন্দসই জায়গায় বদলি করে। বার্নেটের পরিবারের যুক্তি, কোম্পানি প্রকাশ্যে তাঁকে ডেডলাইন ফেল করার জন্য দোষারোপ করে। যে ঘটনায় তাঁর সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয় এবং তাঁকে অন্য প্ল্যান্টে বদলি করতে বাধা দেয়।
Keywords: Boeing, whistleblower, John Barnett, Ahmedabad plane incident
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন