BMC Election: ঠাকরেদের পর পাওয়ার পরিবারেও মিলন আসন্ন? আমূল বদলাতে পারে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণ

People's Reporter: ২০১৭-র ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে শিবসেনা পেয়েছিল ৮৪ আসন, বিজেপি ৮২ আসন, কংগ্রেস ৩১ আসন, এনসিপি ১৩ আসন, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ৭ আসন, সমাজবাদী পার্টি ৬ আসন এবং মিম ২ আসন।
বিএমসি
বিএমসিফাইল ছবি, দ্য প্রিন্ট থেকে সংগৃহীত
Published on

২০১৭ সালের পর মহারাষ্ট্রের বৃহণমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (BMC) নির্বাচন হয়নি। ২০২২ সালের মার্চ মাসে এই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওবিসি কোটা নিয়ে বিবাদ, ডিলিমিটেশন নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও মামলার কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি দেশের সবথেকে অর্থবান মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে। নির্ধারিত সময়ের ৩৪ মাস পরে এবার হতে চলেছে যে নির্বাচন। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২০২২ সালের ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট জানায় মোট আসনের মধ্যে ১৫৬টি সাধারণ, ১৫টি তফশিলি জাতি, ২টি তফশিলি উপজাতি, ৬৩টি আসন ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। একইসঙ্গে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ২২৭ থেকে বেড়ে হয় ২৩৬। যা নিয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হয় সরকার। এবারও ২২৭ আসনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩১৫। যার মধ্যে ৫৫ লক্ষ ১৬ হাজার ৭০৭ জন পুরুষ এবং ৪৮ লক্ষ ২৬ হাজার ৫০৯ জন মহিলা। অন্যান্য ভোটার সংখ্যা ১,০৭৭। সর্বাধিক ভোটার আছে ১৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে, ৬২ হাজার ৪৯৫ জন এবং সর্বনিম্ন ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩১,৫৭৫ জন।

২০১৭-র ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে শিবসেনা পেয়েছিল ৮৪ আসন, বিজেপি ৮২ আসন, কংগ্রেস ৩১ আসন, এনসিপি ১৩ আসন, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ৭ আসন, সমাজবাদী পার্টি ৬ আসন এবং মিম ২ আসন। যদিও এরপর মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ব্যাপক ভাঙাচোরা হয়েছে। শিবসেনা, এনসিপি দু’টুকরো হয়েছে। বিজেপি শিবসেনা প্রতিপক্ষ হয়েছে। মহাবিকাশ আঘাদি এবং মহাযুতি জোট এখন যুযুধান দুই পক্ষ। মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণ বিগত কয়েক বছরে পুরোই পাল্টে গেছে। ফলে বিধানসভা নির্বাচনে যে ফলাফলই হোক না কেন, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে ফলাফল কী হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।

বিএমসি নির্বাচনী নির্ঘণ্ট অনুসারে আগামী ১৫ জানুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ফলপ্রকাশ হবে ১৬ জানুয়ারি। একই নির্ঘণ্ট মেনে মহারাষ্ট্রে আরও ২৯টি পুরসভা, ৩২ জেলা কাউন্সিল, ৩৩৬ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচন হবে। ফলে সব রাজনৈতিক দলই ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন মহাযুতি জোটের পক্ষে বিজেপি এবং শিবসেনা একনাথ শিন্ধে গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতা প্রায় করে নিয়েছে। এখনও চূড়ান্ত সমঝোতা বা ঘোষণা না হলেও জানা যাচ্ছে শিবসেনা একনাথ শিন্ধে গোষ্ঠী ৯৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। যদিও শিবসেনার দাবি ছিল ১০০ থেকে ১১২ আসন।

বিজেপির অন্য এক সূত্র অনুসারে শিবসেনাকে কোনোভাবেই ৯০ আসন দেওয়া সম্ভব নয়। সর্বাধিক ৬০ আসন দেওয়া যেতে পারে। বিজেপি লড়াই করবে ১৪০ আসনে। বাকি ২৭ আসন ছাড়া হবে এনসিপি অজিত পাওয়ারকে। যদিও এই সূত্রকে মান্যতা দিতে রাজী নয় শিবসেনা একনাথ শিন্ধে গোষ্ঠী।  

অন্যদিকে মহাযুতি জোটসঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও এই সমঝোতা থেকে সম্পূর্ণ বাদ রাখা হয়েছে অজিত পাওয়ারের এনসিপিকে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে এনসিপি অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর এককভাবে লড়াই করার সম্ভাবনাই বেশি। যদি না অজিত পাওয়ারও ঠাকরে ভাইদের মিলনের পরে ফের আবার কাকা শারদ পাওয়ারের শিবিরে ফিরে যান। সেক্ষেত্রে পুরো নির্বাচনী সমীকরণে আরও জট সৃষ্টি হবে।

বুধবারই কুড়ি বছর পর দুই ঠাকরে ভাইয়ের মিলনে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ ঠাকরে জোট বেঁধে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। সূত্র অনুসারে, শিবসেনা (ইউবিটি) ১৪৫ থেকে ১৫০ আসনে, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা ৬৫ থেকে ৭০ আসনে এবং এনসিপি (এসপি) ১০ থেকে ১২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিরোধী মহাবিকাশ আঘাদির শরিক হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস এই নির্বাচনে আলাদা ভাবে লড়াই করবে বলেই জানা গেছে।

যদিও ঠাকরে ভাইদের মিলনের পরে বুধবার আচমকাই পাওয়ার শিবিরেও বেশ কিছু বদল আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে পাওয়ার পরিবারের বিবাদ মেটার। এই বিষয়ে শারদ পাওয়ারের এনসিপি-র কার্যকরী সভাপতি এবং তাঁর খুড়তুতো বোন সুপ্রিয়া সুলের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গতকাল রাতে অজিত পাওয়ারের পক্ষ থেকে সুভাষ জগতাপ ও ​​সুনীল টিংরে এবং তাঁর কাকা শারদ পাওয়ার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিশাল তাম্বে ও অঙ্কুশ কাকাডের মধ্যে প্রথম দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঠাকরে শিবিরের পর পাওয়ার শিবিরও এক হয়ে গেলে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ অন্য দিকে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উল্লেখযোগ্যভাবে দুই ঠাকরে ভাইয়ের মিলনে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিজেপি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার জোটের ফলে ভাঙতে পারে বিজেপি শিবিরের ভোট ব্যাঙ্ক। দুই ভাইয়ের মিলনে বিজেপি শিবিরের কোনও ক্ষতি হবেনা বলে আগেভাগেই দাবি করা হলেও রাজনৈতিক অঙ্ক অন্য কথা বলছে। যেখানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে মারাঠা ও মুসলিম ভোট।

প্রথমত ঠাকরে ভাইদের জোট আগেই জানিয়ে দিয়েছে এবার বিএমসি-র মেয়র হবেন কোনও মারাঠি। যা প্রথমেই তাদের মারাঠা ভোট সংগ্রহের ক্ষেত্রে এগিয়ে রেখেছে। এছাড়াও দুই ঠাকরে ভাইয়ের জোট যুক্ত হবার সম্ভাবনা বড়ো সংখ্যায় দলিত ভোট। মুম্বাইয়ের মোট ২২৭ আসনের মধ্যে ৬৭ আসনে জয়ী প্রার্থীর জয়ের ব্যবধানের চেয়ে এমএনএস-এর প্রাপ্ত ভোট বেশি। এই ৬৭ আসনের মধ্যে ৩৯ আসনে এগিয়ে মহাবিকাশ আঘাদি জোট প্রার্থীরা। ফলে ২৬ শতাংশ মারাঠাভাষী ভোটার, ১১ শতাংশ মুসলিম ভোটার এবং ১১ শতাংশ দলিত ভোটারের ভোট ঠাকরে ভাইরা একজায়গায় করতে পারলে শাসক মহাযুতির সমস্যা যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।   

বিএমসি
BMC Election: মহারাষ্ট্রে জোট জট - বিজেপি শিন্ধেসেনার আসন সমঝোতার আলোচনায় বাদ অজিত পাওয়ারের এনসিপি
বিএমসি
Maharashtra: রাজ ঠাকরে উদ্ধব ঠাকরের জোট - মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in