
বিহারের ভোটার তালিকার পুনঃমূল্যায়ন সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনের (EC) নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)। শনিবার বিষয়টিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে এই সংস্থা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এডিআর-এর বক্তব্য অনুসারে, বিহারে ‘ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special intensive revision of electoral rolls) লক্ষ লক্ষ ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। এডিআর-এর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এই পিটিশন দাখিল করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ (Prashant Bhushan)।
সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার (PIL) আবেদনে, নির্বাচন কমিশনের ২৪ জুনের নির্দেশিকা বাতিল করার দাবি জানিয়েছে এডিআর। কমিশনের নির্দেশিকা অনুয়ারে বিহারের ভোটারদের এক বড়ো অংশকে ভোটার তালিকায় থাকার জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
এডিআর-এর পক্ষ থেকে করা আবেদনে বলা হয়েছে যে, এই পদক্ষেপ সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১, ৩২৫ এবং ৩২৬ ধারা লঙ্ঘন করে এবং ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ১৯৬০ সালের ভোটার নিবন্ধন বিধিমালার ২১ক ধারার বিধান লঙ্ঘন করে।
গত জুন মাসের ২৪ তারিখ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের নির্দেশ জারি করা হয়। যার ভিত্তি বছর হিসেবে ঠিক করা হয়েছে ২০০৩ সালকে। কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে, রাজ্যের ৭.৮ কোটি ভোটারকে বিশেষ ফর্ম পূরণ করতে হবে। ২০০৩ সালের তালিকায় যাদের নাম ছিল, সেই ৪.৯৬ কোটি ভোটারকে কোনও অতিরিক্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে না। কিন্তু ২০০৩-পরবর্তী সময়ে যাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ - ২.৯৩ কোটি মানুষকে তাদের নিজের এবং তাদের পিতামাতার জন্ম তারিখ এবং/অথবা জন্মস্থানের প্রমাণপত্র দিতে হবে।
কমিশনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এডিআর জানিয়েছে, ২৪শে জুনের নির্দেশিকা “ভোটার তালিকায় থাকার দায়িত্ব রাজ্যের উপর থেকে নাগরিকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই বিশেষ পুনর্মূল্যায়নে আধার বা রেশন কার্ডের মতো সনাক্তকরণ নথি বাদ দেওয়া হয়েছে, যা প্রান্তিক মানুষ এবং গরিব মানুষদের ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”
সুপ্রিম কোর্টে করা পিটিশনে এডিআর জানিয়েছে, নির্দেশিকাতে যে তথ্যাদি জমা করার কথা বলা হয়েছে, তাতে যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব এবং এই সংশোধনের জন্য অযৌক্তিকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়সীমা, যার ফলে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে এবং তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে”।
ADR-এর মতে, বিহারের মতো রাজ্যে এই ধরণের সংশোধনী অবাস্তব। কারণ, যেখানে জন্ম নিবন্ধনের হার ঐতিহাসিকভাবে কম এবং বহু ভোটারের কাছে সরকারী নথিপত্র নেই। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিহারের তিন কোটিরও বেশি ভোটার এই মানদণ্ডগুলি পূরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
শীর্ষ আদালতের কাছে করা আবেদনে এডিআর এই পুনর্মূল্যায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এডিআর তাদের আবেদনে জানিয়েছে, বিহারে ২০২৪-এর অক্টোবর থেকে ২০২৫-এর জানুয়ারি পর্যন্ত ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় সংশোধনের কাজ করা হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় গুরুতর কোনও অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়নি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কমিশনের এই ধরণের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শেষের দিকেই ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিহার বিধানসভার নির্বাচন। আগামী ২২ নভেম্বর বর্তমান বিহার বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে। অর্থাৎ তার আগেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে আগামী অক্টোবর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে দুই অথবা তিন পর্বে। দিওয়ালী এবং ছট পুজাকে মাথায় রেখেই নির্বাচনী সূচী তৈরি হবে। ২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন পর্বে। সেবার ২৮ অক্টোবর ৭১ আসনে, ৩ নভেম্বর ৯৪ আসনে এবং ৭ নভেম্বর ৭৮ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের ফলাফল ঘোষিত হয়েছিল ১০ নভেম্বর।
Keywords: Bihar Elections, ADR, Supreme Court, Voter List, Revision Order
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন