
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে জারি করা হয়েছে একাধিক নির্দেশিকাও। এবার এই নিয়ে আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। নাম না করে কমিশনকে বিজেপির প্রচারক বলেও কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার অভিযোগ, বিহার তো শুধুই বাহানা। কমিশন আসলে বাংলাকেই নিশানা করছে।
নির্বাচন কমিশনের জারি করা নয়া নির্দেশিকা অনুসারে, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে নাগরিকত্বের সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র দিতে হবে। এছাড়া ২০০৩ সালের পরবর্তী সময়কালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সকলকেই তাঁদের জন্মস্থানের নথি জমা দিতে হবে প্রমাণ হিসেবে। সকলকে নাগরিকত্বের 'সেলফ অ্যাটেস্টেড ডিক্লারেশন’ জমা দিতে হবে।
কমিশনের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা জন্ম নিয়েছেন, সেই ভোটারদের জন্মতারিখ এবং জন্মস্থানের নথি দাখিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভোটাররা জন্ম শংসাপত্র, পাসপোর্টের মতো নথি প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে পারবেন। ১৯৮৭ সালে ১ জুলাইয়ের পর যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়ের নথির সঙ্গে বাব-মায়েরও নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের পরের জন্মগ্রহণকারীদের জন্যেও একই নিয়ম।
কমিশনের এই নয়া নিয়ম নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বিহারে বিজেপি সরকার। তাই তারা আসলে বাংলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করছে। বিজেপি যা বলছে, কমিশন তাই করছে। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না-বলে নির্বাচন কমিশন কখনওই এটা করতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত সরকার কখনওই ক্রীতদাস নয়"।
অন্যদিকে, দলীয় বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন। কমিশনের এই নির্দেশ নিয়েও আপত্তি তোলেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন আমি আমার দলের বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য দেব? আমি কেন তাঁর গোপনীয়তা জানাব?’’ একই সঙ্গে কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
মমতার কথায়, ‘‘এটা মারাত্মক! ১৯৮৭ সালের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক নয়! ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছে। কেন ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যেকার সময়কে নিশানা করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না"।
তৃণমূল নেত্রীর প্রশ্ন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণেই কি এই নিয়ম? গরিবেরা কীভাবে বাবা-মায়ের শংসাপত্র পাবেন? এটা কি এনআরসি? এ ভাবেই এনআরসি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে কি? কী উদ্দেশ্য তাদের, তা পরিষ্কার করে জানাক। এটা কী হচ্ছে দেশে? আমি কমিশনকে অনুরোধ করব নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে ভোটার তালিকা সংশোধক করুক, যাতে কোনও ভোটারের নাম বাদ না পড়ে। আমাদের তাতে আপত্তি নেই"।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের বাইরে থেকে লোক এনে ভোটার তালিকা তৈরি করবে। তাঁর কথায়, "এতে অনেক ঘাপলা আছে, দুর্নীতি রয়েছে"। এই নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবে তৃণমূল। এমনকি ভবিষ্যতে তৃণমূল বড় আন্দোলনের পথেও হাঁটবে বলে জানান মমতা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন