দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির পর এবার জলে ভাসলো কোচবিহারও। শনিবার রাত থেকে একটানা ভারী বৃষ্টিতে আগেই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ওই অঞ্চলের সব নদীতে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় জল ঢুকে গেছিল বেশ কিছু এলাকায়। এবার তোর্সার জলে ভাসলো কোচবিহার। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে ভারী বৃষ্টি আজও চলবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামীকাল তিনি মুখ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরবঙ্গ যাবেন।
প্রশাসনিক সূত্র অনুসারে, গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভুটান এবং পাহাড় অঞ্চলে লাগাতার ভারী বৃষ্টির কারণে সেই জল নেমে এসেছে সমতল অঞ্চলে। যে জলে প্লাবিত হয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের বহু এলাকা। শিলিগুড়ি এবং শিলিগুড়ি সংলগ্ন বেশ কিছু অঞ্চলে মহানন্দার জলে প্লাবিত হয়েছে। আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল গভীর রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীতে জলস্তর বাড়তে থাকে। শিলিগুড়িতে মহানন্দা সংলগ্ন পোড়াঝাড় এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে জল ঢুকে যায়। জলের স্রোত অত্যন্ত বেশি থাকায় সমস্যায় পড়ছে উদ্ধারকাজে আসা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে একাধিক ট্যুরিস্ট স্পট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে করোনেশন ব্রিজ দিয়ে দার্জিলিং ও সিকিমের পাহাড়ের সঙ্গে যোগাযোগ। পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে গোরুবাথান লাভার রাস্তা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। প্রবল বিপর্যয়ের জেরে বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু ট্রেন। বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রাপথে বদল আনা হয়েছে।
কোচবিহার শহরের প্রায় সব ওয়ার্ডেই কম বেশি জল জমেছে। জল কোথাও কোথাও কোমর ছুঁয়েছে। তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে প্রশাসন। উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এর মধ্যেই তোর্সা নদীর জল ক্রমশ বেড়ে চলায় নতুন নতুন এলাকায় জল ঢোকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নদীতে জলস্তর বেড়ে যাবার কারণে শহরের ঢুকে পড়া জলও বেরোতে পারছেনা।
অন্যদিকে পাহাড়ের জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে মালদাতেও। মহানন্দা নদীর জল আরও বাড়লে এই অঞ্চলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তৈরি হতে পারে বন্যা পরিস্থিতিও। বিশেষ করে মাণিকচক সংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ নিজের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমাদের পুলিশ আপনাদের উদ্ধার করে নেবে। এই উদ্ধার সংক্রান্ত খরচ আমাদের এবং পর্যটকদের এই বাবদ উদ্বিগ্ন না হবার জন্য অনুরোধ করছি।” তিনি আরও বলেন, “প্রাকৃতিক অবস্থানের জন্য মিরিকের মতো কিছু কিছু জায়গা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও আরো অনেক এলাকা আমাদের নজরে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব খবর রাখছি, প্রয়োজনমতো নির্দেশ দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যবস্থা করছি। আমাদের অফিসার ও পুলিশ সর্বত্র ও সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে সকল সহায়তা নিয়ে পৌঁছে যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর পোষ্টে কয়েকটি হেল্পলাইন নাম্বারও দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল - যোগাযোগের ফোন নম্বর ০০৯১- ২২১৪-৩৫২৬/০০৯১-২২৫৩-৫১৮৫
টোল ফ্রি নম্বর ৯১-৮৬৯৭৯-৮১০৭০ এবং ১০৭০
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন