রাতভর বেলাগাম বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর কলকাতা। দেবীপক্ষের শুরুতেই জলে ভাসছে কলকাতা ও আশপাশের এলাকা। মাথায় হাত পুজো উদ্যোক্তাদের, ছোটো ব্যবসায়ীদের। শহরের বিভিন্ন জায়গা বানভাসি। শহর কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বহু নিচু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক অতীতে সারা রাত ধরে এরকম বৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না অনেকেই। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে পাঁচ ঘণ্টায়। জানা গেছে, প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়।
একটানা ছ’ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সঙ্গীতশিল্পী শিলাজিত তাঁর ফেসবুক পোষ্টে লিখেছেন, “আমি ভাই এরকম বৃষ্টি দেখিনি অনেকদিন,এই season-এ তো নয়...তার ওপর আশ্বিনের শারদ প্রভাতে শোনার পরে দিনই??” শ্রীনন্দাশঙ্কর জলমগ্ন অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ছবি পোষ্ট করে লিখেছেন, "এটাই এখনকার পরিস্থিতি এবং বিদ্যুৎ নেই।"
সোমবার রাত এগারোটা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি একটানা চলে প্রায় ভোর পর্যন্ত। কলকাতা, সংলগ্ন অঞ্চল সহ ভারী বৃষ্টি হয়েছে হাওড়া, দুই ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুরেও। এদিনের বৃষ্টিতে কলকাতার কাশিপুর, হাতিবাগান, মাণিকতলা, হালতু, কসবা, গাঙ্গুলীবাগান, বিজয়গড়, গলফগ্রীন, গড়িয়া, বেহালায় ভালো জল জমেছে। বহু জায়গায় একতলায় জল ঢুকে গেছে। জল জমেছে নিউটাউন এবং সল্টলেকের বিভিন্ন অংশেও। পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জেও জল। জানা গেছে, উত্তর কলকাতার অনুপাতে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। অতি বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় থমকেছে রেল চলাচল। জল জমে গেছে আরজিকর হাসপাতাল অঞ্চলেও।
আবহাওয়া দপ্তর থেকে আগেই জানানো হয়েছিল এবার পুজোয় নিম্নচাপের কারণে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গত দু’দিনই জুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাত থেকে যেভাবে একটানা ভারী বর্ষণ হয়েছে এবং সেই বৃষ্টি যদি মঙ্গলবারও চলে তাহলে অনেক জায়গাতেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে আজও সারাদিন বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্র অনুসারে, শহরে জমা জল দ্রুত নামাতে পাম্প চালানো হচ্ছে। কাজ হচ্ছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাম্প চালিয়ে পুরসভা জল নামানোর কাজ শুরু করেছে। এই অবস্থায় আর বৃষ্টি না হলে জল দ্রুত নামতে পারে। তবে যেভাবে জল জমেছে তা দ্রুত নামার সম্ভাবনা কম। কিন্তু একভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে জল নামা কঠিন হবে। কারণ ভোর থেকে লকগেট খুলে দেওয়া হলেও দুপুর বারোটার পরে গঙ্গায় জোয়ারের কারণে সব গেট বন্ধ রাখতে হবে বিকেল চারটে পর্যন্ত। ফলে তখনও যদি ভারী বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এদিনের বৃষ্টি ও জল জমার পরে বহু নাগরিকই শহরের নিকাশী ব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। তাঁদের বক্তব্য, এর আগেও শহরে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শহর এভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েনি। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন