
সোমবার যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও, তা প্রকাশ করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। মাঝরাতে এসএসসির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে বিবৃতি প্রকাশ করলেও, তাতে তালিকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। তালিকা প্রকাশের দাবিতে আচার্য ভবনের সামনে ২০ ঘন্টা ধরে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন চাকরিহারারা। এর জেরে সোমবার থেকে এসএসসি দফতরের ভিতরে 'আটকে' রয়েছেন চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত মজুমদার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। অন্যদিকে, মধ্যশিক্ষা দফতরের ভিতরে আমরণ অনশনে বসেছেন চাকরিহারা গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের একাংশ।
গত ১১ এপ্রিল যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার কথা দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেছিলেন, ২১ এপ্রিল সোমবারের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করবে এসএসসি। কথা ছিল সোমবার সন্ধ্যে ৬ টা নাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু সোমবার কেটে মঙ্গলবার সকাল হয়ে গেছে, এখনও পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করেনি এসএসসি। তালিকা প্রকাশ না করায় রাতভর দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন চাকরিহারারা। ঘেরাও করে রাখেন চেয়ারম্যানকে।
অন্যদিকে, সোমবার গভীর রাতে এসএসসির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, “২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে, এসএসসি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবে। এবং বিভাগ কর্তৃক জানানো হচ্ছে, যে শিক্ষকেরা চাকরি করেছেন, তাঁদের বেতন বর্তমান ব্যবস্থা অনুসারে বিতরণ করা হবে”। বিবৃতিতে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়ার পরে মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। তিনি জানান, “যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো তাঁদের মাইনে পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তাই এই আন্দোলনেরও কোনও মানে নেই। আর যাঁরা ওখানে আছেন, তাঁদের অনেকেই হয়তো অযোগ্য। তাঁদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কোনও গাইডলাইন না দিলে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা দ্রুত রিভিউ পিটিশনের জন্য যাচ্ছি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টই আমাদের গাইডলাইন দিয়ে দেবেন। আমরা যে ভাবে এগোচ্ছি, তাঁদের আস্থা রাখা উচিত। এ বার আস্থা রাখবেন কি রাখবেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার”।
তালিকা প্রকাশের দাবিতে মঙ্গলবার সকালেও দফায় দফায় স্লোগান উঠছে এসএসসি ভবনের সামনে। চাকরিহারাদের দাবি, ওএমআর শিট এবং যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। আন্দোলনকারীদের একাংশের দাবি, কমিশন যদি যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে না চায়, তাহলে অবিলম্বে অযোগ্যদের ছাঁটাই করতে হবে।
সোমবার রাত থেকে এসএসসি দফতরের ভেতর আটকে রয়েছেন চেয়ারম্যান-সহ অন্য আধিকারিকরা। রাতের খাবার এবং মঙ্গলবার সকালে চা-ও ভেতরে নিয়ে যেতে দেননি চাকরিহারারা। চাকরিহারাদের দাবি, যতক্ষণ না যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে না আসবে, ততক্ষণ চেয়ারম্যানকে দফতর থেকে বেরোতে দেবেন না।
তবে পুলিশের সঙ্গে এদিন সকাল থেকে কোনও সংঘাতের চিত্র ধরা পড়ে নি। বিধাননগর পুলিশের ডিসি বলেন, “পুলিশ অফিসারেরা নিজেদের ডিউটি করছেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পুলিশ যখন নিজের কাজ করতে গিয়েছে, (সোমবার) সন্ধ্যা থেকে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে এবং আটকানো হয়েছে। ভিতর থেকে তাঁরা বেরোনোর সময় আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। পুলিশকে ডিউটি করতে আটকানো হলে তা আইনসম্মত হবে না। এই ভাবে পুলিশকে ডিউটিতে বাধা দেওয়া উচিত হবে না"।
অন্যদিকে, সোমবার বিকেলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরের তিনতলায় প্রথমে অবস্থান শুরু করেছিলেন একজন শিক্ষাকর্মী। এরপর রাতের দিকে আমরণ অনশন শুরু করেন আটজন শিক্ষাকর্মী। আপাতত পর্ষদের দফতরে কনফারেন্স রুমের ভিতরে অনশন চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, শিক্ষকদের মতো তাঁদের জন্যেও ‘ক্ল্যারিফিকেশন পিটিশন’ চাইতে হবে। পাশাপাশি, যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশেরও দাবি রয়েছে তাঁদের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন