এখন ২২ তারিখ। সময় রাত বারোটা পেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এসএসসি ভবনের সামনের অঞ্চল। কথা ছিল ২১ তারিখ যোগ্য অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কথা দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। ১১ এপ্রিল তিনি বলেছিলেন, ২১ এপ্রিল সোমবারের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করবে এসএসসি। কিন্তু সোমবার ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সেই তালিকার দেখা নেই। উল্টে, নতুন কিছু নিয়ম দেখিয়ে এখন পুরো বিষয়টা গুলিয়ে দিতে চাইছে এসএসসি বলেই অভিযোগ আন্দোলনরত চাকরিহারাদের। পুরো বিষয়টির মীমাংসা চেয়ে হাজার হাজার চাকরিহারা শিক্ষকের বিক্ষোভ এখনও চলছে সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনে। রাতভর তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন। অন্যদিকে চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে অবস্থান করছেন।
সোমবার দুপুরে করুণাময়ী মোড় থেকে চাকরিহারা শিক্ষকদের মিছিল শুরু হয়ে এসএসসি ভবনে পৌঁছায়। এদিন যোগ্য-অযোগ্যদের নামের তালিকা প্রকাশের দাবিতেই এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দেয় আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। এসএসসি ভবনের সামনে পৌঁছে গেলেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চাকরিহারাদের দাবি, হয় যোগ্যদের লিস্ট প্রকাশ করুন, নয়তো ২২ লক্ষ ওএমআর প্রকাশ করুন। তাঁদের আরও অভিযোগ, আন্দোলন ভেঙে দেবার পরিকল্পনা চলছে।
চাকরিহারা শিক্ষকরা দিনভর অপেক্ষা করলেও রাত পর্যন্ত কোনও তালিকা প্রকাশিত হয়নি। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভ বেড়েছে বিক্ষোভরত শিক্ষকদের। এদিন এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেও কোনও সুরাহা হয়নি। উল্টে যে ১৪ জন প্রতিনিধি বৈঠকে গেছিলেন, তাঁরা বেরিয়ে অভিযোগ করেন, যোগ্যদের তালিকা থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। তারপরেই ঘেরাও করা হয় এসএসসি চেয়ারম্যানকে।
শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, আগে বলা হয়েছিল যোগ্য অযোগ্যের তালিকা প্রকাশিত হবে। এখন বলা হচ্ছে চতুর্থ তালিকা থেকে সবাইকে অযোগ্য করে দেওয়া হবে। আমরা যোগ্য অযোগ্যদের তালিকার দাবিতে অনড় থাকছি।
চাকরিহারা শিক্ষক প্রতিনিধিরা এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে জানান, তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে কিছুই বলেনি এসএসসি। তাঁদের আরও অভিযোগ, এখন বলা হচ্ছে প্রথম থেকে তৃতীয় কাউন্সেলিং-এর নাম দেওয়া হবে। যার অর্থ এরপর যাদের কাউন্সেলিং হয়েছে তাঁরা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগে মোট কাউন্সেলিং হয়েছিল ১৫টির বেশি। কিন্তু এদিন এসএসসি থেকে জানানো হয় প্রথম তিনটি কাউন্সেলিং-এর তালিকা দেবে এসএসসি। চতুর্থ কাউন্সেলিং থেকে সব কাউন্সেলিং বাতিল করা হবে। যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে সরকার সপ্তম কাউন্সেলিং পর্যন্ত বৈধ ঘোষণা করেছিল। তাহলে এখন কেন থার্ড কাউন্সেলিং বলা হচ্ছে? এভাবে যোগ-অযোগ্যদের মিলিয়ে দিয়ে আরও বড়ো গণ্ডগোল তৈরি চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁরা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না এই বিষয়ের সুরাহা হবে ততক্ষণ চেয়ারম্যান থেকে কর্মচারী কাউকে দপ্তর থেকে বেরোতে দেওয়া হবেনা।
চাকরিহারা শিক্ষকদের অভিযোগ, তাঁদের চাকরি গেছে এসএসসি-র দুর্নীতির জন্য, পর্ষদের দুর্নীতির জন্য। এখন আমাদের চাকরি নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। তাঁদের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীরা সবাই প্রকাশ্যে বলুন দোষ ওনাদের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন