সারা দেশে বিতর্ক এবং বিক্ষোভের মাঝে বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৫ মে পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ড এবং কাউন্সিলে অ-মুসলিমদের নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশ এবং ‘ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ’ সংক্রান্ত কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে। ওইদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। নতুন ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাবে না। পাশাপাশি, যেসব সম্পত্তিকে পূর্বে ‘ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও পরিবর্তন করা যাবে না। পাশাপাশি আগামী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রকে নিজের বক্তব্য জানাতে হবে সুপ্রিম কোর্টে।
সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে আশ্বস্ত করেন যে, সরকার এই সময়ে ওয়াকফ বোর্ড বা কাউন্সিলে কোনও সদস্য নিয়োগ করবে না। তিনি আরও জানান, পূর্বে ঘোষিত কোনও ওয়াকফ সম্পত্তির অবস্থাও এই সময়ের মধ্যে বদলানো হবে না।
আগে প্রচলিত আইনে, কোনও সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে যদি ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে তাকে ‘ওয়াকফ’ হিসেবে ঘোষণা করার সুযোগ ছিল—এমনকি যদি মালিকানার কোনও লিখিত প্রমাণ না-ও থাকে তাও। এই বিধানটি নতুন আইনে বাতিল করা হয়েছে, যা বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, “আমরা দেখেছি যে আইনে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। সম্পূর্ণ আইন স্থগিত রাখা যাবে না। তবে আমরা চাই না, এই মুহূর্তে বাস্তব পরিস্থিতিতে কোনও রকম পরিবর্তন ঘটুক।”
তুষার মেহতা বলেন, "ওয়াকফ আইন স্থগিত রাখা এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। আইনটি পড়েই কেবল এর কার্যকারিতা স্থগিত করা ঠিক নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ অভিযোগ করেছেন—গ্রাম, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সবই ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।"
আদালত পরিষ্কার জানিয়েছে, এখনই পুরো আইনটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র বিতর্কিত কয়েকটি ধারার উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে, যাতে নতুন করে অশান্তি না ছড়িয়ে পড়ে।
নতুন আইনের একটি ধারা অনুযায়ী, কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর পাঁচ বছর না হলে তিনি কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করতে পারবেন না। এটিও আইনের একটি বিতর্কিত অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বিতর্কের পর প্রথমে লোকসভায় এবং পরে রাজ্যসভায় পাশ হয় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫। গত ২ এপ্রিল লোকসভায় এবং ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে পাশ হয় ওয়াকফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল। লোকসভায় এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে যথাক্রমে ২৮৮ ও ২৩২। রাজ্যসভার ভোটাভুটিতে পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়ে ১২৮ ও ৯৫। সংসদের নিম্ন ও উচ্চকক্ষে এই বিল পাশ হবার পর ৫ এপ্রিল এতে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। গত ৮ এপ্রিল থেকে ওয়াকফ সংশোধনী আইন, ২০২৫ কার্যকরী হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন