সংশোধিত ওয়াকফ আইনে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট! বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি

People's Reporter: প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে তিনটি পথ। এক, আমরা পিটিশন শুনব। দুই, হাই কোর্টে পাঠিয়ে দেব। তিন, হাই কোর্টে পড়ে থাকা পিটিশনও গ্রহণ করে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব”।
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট ফাইল ছবি
Published on

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে অশান্তি ছড়িয়েছে গোটা দেশে। নয়া ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মোট ৭৩টি মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ইসলামিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফেও একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার শীর্ষ আদালতে ছিল সেই সব মামলার শুনানি। শুনানিতে ওয়াকফ সংশোধিত আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী কোনও স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে ছিল ওয়াকফ সংশোধিত আইন মামলার শুনানি। শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে হওয়া অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, “যে হিংসা হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এ রকম হওয়া উচিত নয়”।

এরপরেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে তিনটি পথ। এক, আমরা পিটিশন শুনব। দুই, হাই কোর্টে পাঠিয়ে দেব। তিন, হাই কোর্টে পড়ে থাকা পিটিশনও গ্রহণ করে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব”।

অন্তর্বর্তী নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে - এক, কোর্ট যে সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে ঘোষণা করবে, তাকে ‘ওয়াকফ নয়’ বলে ধরা যাবে না। দুই, যে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ রয়েছে, তা নিয়ে জেলাশাসক প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালাতে পারবেন। কিন্তু সেই বিধান কার্যকর করা যাবে না।

এদিনের শুনানিতে আবেদনকারীদের আইনজীবী মনু সিঙ্ঘভি নয়া ওয়াকফ সংশোধিত আইনের কিছু অংশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের আবেদন জানান। অন্যদিকে, ওয়াকফ আইনের পক্ষে সওয়াল করলেন আইনজীবী এসজি মেহতা। তাঁর সওয়াল, যৌথ সংসদীয় কমিটি ৩৮ বার বৈঠক করেছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে লক্ষ লক্ষ স্মারকলিপি পরীক্ষা করেছে। তারপরেই সংসদের দুই কক্ষে এই বিল পাশ হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্তকরণ হয়ে গেলে, তাকে কি নতুন আইনে বাতিল ঘোষণা করা যাবে? আইনজীবী মেহতা জানিয়েছে, নথিভুক্তকরণ হলে তা হবে না। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ব্রিটিশরা এ দেশে আসার আগে সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ হত না। অনেক মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি হয়েছিল। যেমন জামা মসজিদ। মেহতার সওয়াল, তাতে নথিভুক্তকরণ করতে বাধা কোথায়?

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কোনটা ওয়াকফ সম্পত্তি, কোনটা নয়, তা নিয়ে কোর্টকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হোক”। আইনজীবী মেহতার দাবি, "১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনেও সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক ছিল”।

এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন যে, কোনটা ওয়াকফ, কোনটা নয়, তা কি ঠিক হবে?’’ আইনে ৯ নম্বর ধারা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি।

ওয়াকফ জমি নিয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘যখন দিল্লি হাই কোর্টে ছিলাম, শুনতাম, সেটা নাকি ওয়াকফের জমিতে। আমাদের ভুল বুঝবেন না। সব ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ ভুল ভাবে হয়নি”। আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পাল্টা সওয়াল, ‘‘আমরা শুনেছি সংসদও ওয়াকফের জমিতে হয়েছে”।

এক নজরে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫ বিতর্ক –

১) দীর্ঘ বিতর্কের পর প্রথমে লোকসভায় এবং পরে রাজ্যসভায় পাশ হয় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫।  গত ২ এপ্রিল লোকসভায় এবং ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে পাশ হয় ওয়াকফ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল। লোকসভায় এই বিলের পক্ষে এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে যথাক্রমে ২৮৮ ও ২৩২। রাজ্যসভার ভোটাভুটিতে পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট পড়ে ১২৮ ও ৯৫।

২) সংসদের নিম্ন ও উচ্চকক্ষে এই বিল পাশ হবার পর ৫ এপ্রিল এতে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। গত ৮ এপ্রিল থেকে ওয়াকফ সংশোধনী আইন, ২০২৫ কার্যকরী হয়।  

৩) নতুন এই আইনের নাম হয়েছে – ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (UMEED) অ্যাক্ট, ১৯৯৫।

৪) সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে আইন হবার পরেও এ নিয়ে বিতর্ক থামেনি। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে এই আইনকে “মুসলিম-বিরোধী” এবং “অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করা হয়। অন্যদিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই আইনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে একটি “ঐতিহাসিক সংস্কার” হিসাবে দাবি করা হয়।

৫) এই আইন প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলমীন (মিম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেন, এই আইনে মুসলিম এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

৬) কেন্দ্রের বক্তব্য অনুসারে, ওয়াকফ (সংশোধন) আইন মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করে নয়, বরং “অতীতের ভুলগুলি সংশোধন করার জন্য” তৈরি করা হয়েছে। এই আইন প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, ভারতে কেউ “জোরপূর্বক এবং একতরফাভাবে” অন্য ব্যক্তির জমি দখল করার কোনও বিধান না রাখে তা নিশ্চিত করাই সরকারের উদ্দেশ্য ছিল। তিনি আরও বলেন, ওয়াকফ আইন সংশোধন করা হয়েছে কারণ কিছু বিধান “ওয়াকফ বোর্ডগুলিকে অভূতপূর্ব ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব” দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট
Waqf Law: আজ শীর্ষ আদালতে ওয়াকফ শুনানি, একাধিক বিরোধিতার পাশাপাশি আইনের পক্ষে ৬ বিজেপি শাসিত রাজ্য

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in