রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা রাজস্থানে প্রবেশের আগেই রাজ্য কংগ্রেসে উপদলীয় কোন্দল মাত্রা ছাড়ালো। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট তার প্রাক্তন ডেপুটি শচীন পাইলটের উপর তীব্র আক্রমণ করে এদিন বলেন, "একজন গদ্দার (বিশ্বাসঘাতক) মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে না"।
এদিন গেহলট আরও বলেন, "মানুষ কীভাবে এমন একজনকে মেনে নিতে পারে যার কাছে ১০ জন বিধায়কও নেই... এমন কেউ যিনি দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং যাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।"
পাইলটকে দায়ী করে গেহলট বলেন, "আমরা ৩৪ দিন হোটেলে বসেছিলাম কারণ এই সরকারকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছিল। অমিত শাহও জড়িত ছিলেন। ধর্মেন্দ্র প্রধানও জড়িত ছিলেন।"
যখন বলা হয় যে পাইলট অভিযোগ অস্বীকার করছেন যে তিনি বিজেপির সাথে হাত মিলিয়েছেন, গেহলট বলেন, "আমার কাছে প্রমাণ আছে। তিনি এটি অস্বীকার করতে পারবেন না। প্রত্যেককে ১০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।"
গেহলট শিবির কেন পাইলটকে গ্রহণ করছে না জানতে চাইলে গেহলট বলেন, "যিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আমাদের বিধায়করা এবং আমি নিজেও ৩৪ দিন হোটেলে ছিলাম, তাকে তাঁরা কীভাবে মেনে নেবে?"
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ধরে রাখার প্রশ্নে গেহলট বলেছেন: আজ আমি এখানে একমাত্র।
হাইকমান্ডের ইঙ্গিত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকমান্ডের ইঙ্গিত ছাড়ুন, আমার কাছে কোনো ইঙ্গিত নেই। আমি হাইকমান্ডের সাথে আছি। পাইলটকে কেউ মেনে নেবে না।
গেহলট বলেন, "হাইকমান্ড রাজস্থানের প্রতি সুবিচার করবে। আমি আমার অনুভূতির কথা অজয় মাকেন এবং হাইকমান্ডকে বলেছি। রাজস্থানে সরকার ফিরে আসা জরুরি। আমি তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। এটা আমার জন্য প্রয়োজনীয় নয় যে আমাকেই মুখ্যমন্ত্রী হতে হবে।"
গেহলট আরও বলেন, "আপনার সমীক্ষা করা উচিত। সরকার যদি আমার মুখ্যমন্ত্রীত্বে ফিরে আসতে পারে তবে আমাকে রাখুন। সরকার যদি অন্য মুখ নিয়ে আসতে পারে তবে তাই করুন। আমি অমরিন্দর সিংয়ের মতো বিদ্রোহ করব না।"
শচীন পাইলটের সাথে তার মতপার্থক্য নিয়ে গেহলট বলেন, "২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থান থেকে যখন কংগ্রেসের ২০ জন সাংসদ জিতেছিল, তখন আমাকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল। যখন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়, তখন আমাকে রাজস্থান থেকে একজন মন্ত্রী করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। শচীন পাইলট জানেন, আমি পাইলটকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করার সুপারিশ করেছিলাম। সেই সময়ে বসুন্ধরা রাজে সরকারের আমলে গুর্জর-মীনাদের লড়াইয়ে ৭০ জন গুর্জর নিহত হয়েছিল।
গেহলট আরও বলেন, "আমি শচীন পাইলটকে মন্ত্রী করার সুপারিশ করেছিলাম। এই চিন্তা করে যে এতে গুর্জর-মীনা বিরোধের অবসান ঘটাবে। পরে, আমি শচীন পাইলটের কাছ থেকে তার নাম সুপারিশ করার জন্য একটি ফোন পাই, যেখানে আমি আগেই এটি সুপারিশ করেছিলাম। শুধুমাত্র একজন মানুষ যার হৃদয়ে ভালবাসা আছে সেই এই সুপারিশ করতে পারে।"
২৫ সেপ্টেম্বর খবর ছড়িয়ে পড়ে যে শচীন পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে। পাইলট নিজেই এমন আচরণ করেছিলেন যেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। তিনি অনেক বিধায়ককে বলেছিলেন যে পর্যবেক্ষক আসছেন, তাদের এই কথা বলতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে, বিধায়ক দলের বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে পাইলট শপথ নিচ্ছেন ভেবে বিধায়করা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই ৯০ জন বিধায়ক জড়ো হয়েছিলেন। তারা সকলেই অনুগত এবং হাইকমান্ডের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যার কারণে আমরা ৩৪ দিন হোটেলে ছিলাম, সরকার পতনের সেই ষড়যন্ত্রকারীকে বিধায়করা কীভাবে মেনে নেবেন, গেহলট বলেছিলেন।
গেহলট বলেন, বিদ্রোহী বিধায়করা পাইলটের সাথে মানেসারে সেই রিসর্টে গিয়েছিলেন যেখানে মধ্যপ্রদেশের বিধায়কদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দলের সভাপতি নিজের দলের সরকারের পতনে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলাবেন এমনটা আমরা আশা করতে পারিনি। ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমনটি ঘটেনি। এই কারণে পাইলটের নাম শুনে বিধায়করা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
দুই মাস আগে, ২৫ সেপ্টেম্বর, কংগ্রেস হাইকমান্ডের নির্দেশিত সিএলপি সভা বিধায়করা বয়কট করে। কারণ মন্ত্রী শান্তি ধারিওয়াল, মহেশ জোশী এবং ধর্মেন্দ্র রাঠোর একটি সমান্তরাল বৈঠক ডেকেছিলেন যেখানে প্রায় ৯২ জন বিধায়ক পদত্যাগ করেছিলেন।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।