ওড়িশায় যৌন হয়রানির বিচার না পেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসেই গায়ে আগুন দিয়ে ছাত্রীর আত্মহননের ঘটনায় বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝির ইস্তফা দাবি করলো কংগ্রেস। বুধবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সারা ভারত মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অলকা লাম্বা এই দাবি করেন।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা বলেন, ওড়িশায় এখন মণিপুরের মত রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হওয়া উচিত। এদিনই তিনি আত্মঘাতী ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য ওড়িশায় পৌঁছেছেন।
ওড়িশায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, যেহেতু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুরো প্রশাসনের শীর্ষে আছেন, তাই এই ঘটনার তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত এবং রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত।
এদিন অলকা লাম্বা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি সহ রাজ্য জুড়ে বড়ো বড়ো পোষ্টার লাগিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব হল, পুরো ওড়িশা রাজ্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রাজ্যের কোনও মহিলা বা কন্যা সুরক্ষিত নয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক কাজে কোনও অভিজ্ঞতা নেই এবং তিনি মাত্র একবছরের মধ্যেই নিজেকে ব্যর্থ প্রমাণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রাজস্থানে মহিলা ও কিশোরীরা নিরাপদ নয় জানিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, লোকসভার আসন্ন অধিবেশনে ওড়িশার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাবে কংগ্রেস।
কংগ্রেস নেত্রীর মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়ে ওড়িয়া ভাষায় ট্যুইট করে নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো উচিত ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা করেননি। যদিও নির্যাতিতা নিজে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কলেজে যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী ওড়িশার বালাসোরের ফকির মোহন কলেজে (অটোনোমাস) বি.এড পড়তেন। গত ১ জুলাই বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিকে লেখা চিঠিতে তিনি জানান, অধ্যাপকের দ্বারা গত কয়েক মাস ধরে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। কলেজ সূত্রে খবর, সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর গত সপ্তাহের শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই ছাত্রী। বিক্ষোভ চলাকালীন আচমকাই গায়ে আগুন দেন তিনি। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসেই ওড়িশায় ১০ দিনে ৫টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যে প্রসঙ্গে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, "রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কারও কোনও ভয় নেই, তা সে পুলিশ বিভাগ হোক বা আইন বিভাগ, কারও মনে কোনও ভয় নেই। কারণ তারা এমন অপরাধ করতে সক্ষম। আমাদের সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আমরা যদি ব্যবস্থা না নিই, তাহলে আমরা জনগণকে কী দেখাব? জনগণের মনে কেন ভয় থাকবে?"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন