Odisha: 'সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হত্যা', ওড়িশায় ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপিকে আক্রমণ রাহুল-নবীনের

People's Reporter: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে রাহুল লেখেন, "দেশের মেয়েরা জ্বলছে, ভেঙে পড়ছে, মরছে আর আপনি নীরব। দেশ জবাব চায়। ভারতের মেয়েরা নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার চায়"।
নবীন পট্টনায়েক এবং রাহুল গান্ধী
নবীন পট্টনায়েক এবং রাহুল গান্ধীফাইল ছবি
Published on

ওড়িশায় কলেজের অধ্যাপকের দ্বারা যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এক শিক্ষার্থী। সোমবার রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর। এই ঘটনাকে 'সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হত্যা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। অন্যদিকে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক (Naveen Patnaik) বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেছেন, 'এটি একটি পরিকল্পিত অবিচার'।

বালাসোরের ফকির মোহন কলেজ (অটোনোমাস)-এর ২০ বছর বয়সী ওই তরুণী বিএড পড়তেন। গত ১ জুলাই বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও কিছু করেনি কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার কলেজের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর সময় আচমকা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ছাত্রী। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সোমবার রাতে এইমস-এ মারা যান তিনি।

ছাত্রীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই একযোগে রাজ্যের বিজেপির সরকারকে নিশানা করছে বিরোধী কংগ্রেস এবং বিজেডি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক বিজেপিকে নিশানা করে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা কীভাবে কারও জীবন নিতে পারে, এটা ভেবে আরও অস্বস্তি হচ্ছে আমার। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল এটি কোনও দুর্ঘটনা ছিল না, বরং এমন একটি ব্যবস্থার পরিণতি, যাদের সাহায্য করার কথা ছিল, কিন্তু তারা নীরব ছিল। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে করতে, মেয়েটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল"।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, "ন্যায়বিচারের জন্য মেয়েটি উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, এমনকি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে বালাসোরের সাংসদের সাথেও দেখা করে তাঁর দুর্দশার কথা জানিয়েছিলেন। যদি একজনও দায়িত্ব নিতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে সম্ভবত মেয়েটির জীবন বাঁচানো যেত"।

নবীন পট্টনায়েক জানিয়েছেন, কেবল শারীরিক আঘাতের কারণেই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়নি। বরং রাজ্য সরকারের অবহেলা, যা তাঁকে তাঁর সংগ্রামে একা ফেলে দিয়েছিল, সমানভাবে দায়ী এই মৃত্যুর জন্য। তিনি লিখেছেন, "সমগ্র ঘটনার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা - একটি পরিকল্পিত অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়"।

ওড়িশার রাজ্যপাল হরি বাবু কাম্ভাপতির কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন, "ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা, যারা ওই শিক্ষার্থীর মরিয়া আবেদন সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের জবাবদিহি করতে হবে"।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় বিজেপির সরকারের তীব্র নিন্দা করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, "এক সাহসী ছাত্রী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁকে ন্যায়বিচার দেওয়ার পরিবর্তে বারবার হুমকি, ভয় দেখানো এবং অপমান করা হয়েছিল। রক্ষা করার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাঁকে আঘাত করতে থাকেন। প্রতিবারের মতো, বিজেপির ব্যবস্থা অপরাধীদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং একটি নিষ্পাপ মেয়েকে আগুনে পুড়ে মরতে বাধ্য করেছিল"।

রাহুল জানিয়েছেন, "এটি আত্মহত্যা নয়, এটি সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হত্যা"।

এরপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে তিনি লেখেন, "দেশের মেয়েরা জ্বলছে, ভেঙে পড়ছে, মরছে আর আপনি নীরব। দেশ জবাব চায়। ভারতের মেয়েরা নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার চায়"।

এদিকে বিরোধীদের পাল্টা নিশানা করেছে বিজেপি। রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের সমালোচনা করে শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এক্স-এ লিখেছেন, "ওড়িশার মেয়ের মৃত্যু নিয়ে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের রাজনীতি দুর্ভাগ্যজনক। একটি সংবেদনশীল বিষয়কে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানো রাহুল গান্ধীর সস্তা মানসিকতার পরিচয় দেয়"।

ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপি সর্বদা মহিলাদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস সর্বদা রাজনৈতিক সুযোগের সন্ধান করেছে। এটা সস্তা রাজনীতির সময় নয়। বরং পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সময়। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত"।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত কলেজের অধ্যাপক এবং প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করেছে ওড়িশা পুলিশ। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in