
ফের গণধর্ষণের অভিযোগ পড়শি রাজ্য ওড়িশায় (Odisha)। এবার সেই ময়ূরভঞ্জ জেলা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক তরুণীকে জঙ্গলে নিয়ে যান তিনজন। তারপর তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। গত ১০ দিনে ওড়িশায় এই নিয়ে পাঁচটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলো। প্রশ্নের মুখে সে রাজ্যের প্রশাসন। এই ঘটনায় মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যের শাসক দল বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন অর্থাৎ বুধবার স্থানীয় মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যান তিনজন। তাঁকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় বিকাশ পাত্র নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু'জন পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এই নিয়ে ১০ দিনে পাঁচটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ওড়িশায়। ১৭ জুন গোপালপুর সমুদ্রসৈকতে এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, একটি উৎসবে যোগ দিতে এক বন্ধুর সঙ্গে গোপালপুর আসেন ওই তরুণী। অভিযোগ, বন্ধুকে বেঁধে রেখে তরুণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে দশজন যুবক। এই ঘটনায় দশজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরপরে ১৮ জুন আরও এক গণধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। কেওনঝড়ে এক ১৭ বছরের কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
এর পরের দিনই ১৯ জুন ফের গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এবার ময়ূরভঞ্জে। অভিযোগ, সেদিন রাতে এক মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যান চারজন। তারপর তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত চারজনই নির্যাতিতার পরিচিত। যে সময় ঘটনাটি ঘটে, সেই সময় নির্যাতিতার স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। অভিযুক্ত চারজন নির্যাতিতাকে জোর করে অন্য এক নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। এবং তাঁকে গণধর্ষণ করেন।
এরপর ২৫ জুন গঞ্জাম জেলার বহরমপুরে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্যাতিতার পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি মেয়েটিকে বিএসসি (নার্সিং) পড়াতে সহায়তা করবেন এবং বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করবেন। এই মামলার তদন্ত করছে পুলিশ।
পর পর এই ঘটনায় রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা। এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজেপি সরকারের নিন্দা করেছেন কটকের কংগ্রেস বিধায়ক সোফিয়া ফিরদৌস। এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় তিনি জানান, "এটি অত্যন্ত দুঃখ এবং লজ্জার বিষয়। নতুন সরকারের এক বছরের মধ্যে ওড়িশায় নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। এত বড় ঘটনার পরেও সরকার কোনও দুঃখ প্রকাশ করছে না বা কোনও দৃঢ় পদক্ষেপও নিচ্ছে না"।
তাঁর প্রশ্ন, "রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কারও কোনও ভয় নেই, তা সে পুলিশ বিভাগ হোক বা আইন বিভাগ, কারও মনে কোনও ভয় নেই। কারণ তারা এমন অপরাধ করতে সক্ষম। আমাদের সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আমরা যদি ব্যবস্থা না নিই, তাহলে আমরা জনগণকে কী দেখাব? জনগণের মনে কেন ভয় থাকবে?"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন