
মারা গেলেন ওড়িশার সেই নির্যাতিতা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবার রাতে মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল এবং কলেজের অধ্যক্ষকে।
ওড়িশার বালাসোরের ফকির মোহন কলেজ (অটোনোমাস)-এর ২০ বছর বয়সী ওই ছাত্রী বি.এড পড়তেন। গত ১ জুলাই বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিকে লেখা চিঠিতে তিনি জানান, অধ্যাপকের দ্বারা গত কয়েক মাস ধরে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। কলেজ সূত্রে খবর, সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ এবং প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল কমপ্লেইন্টস কমিটির বিরুদ্ধেও। জানা গেছে, ওই ছাত্রী বারবার যৌন হেনস্থার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরেই চরম পথ বেছে নেন ছাত্রী।
শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ওই ছাত্রী। বিক্ষোভ চলাকালীন আচমকাই গায়ে আগুন দেন তিনি। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন।
ওই ছাত্রীকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তরুণীর দেহের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গেছে। সংকটজনক অবস্থায় বালাসোরের জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে রেফার করা হয় এইমস-এ। সেখানেই সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়ি বালাসোর জেলার পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া গ্রাম ভোগরাইতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার ওড়িশা সফরে এসে ওই ছাত্রীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, "ছাত্রীর মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ছাত্রীর জীবন বাঁচানো যায়নি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি"।
দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "আমি মৃত ছাত্রীর পরিবারকে আশ্বস্ত করছি, এই ঘটনায় দোষী সকলকে আইন অনুসারে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। এর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি। সরকার পরিবারের পাশে আছে"।
অন্যদিকে, সোমবার নির্যাতিতার বাবা অভিযোগ করেন, কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির সদস্যরা এবং অধ্যক্ষ তাঁর মেয়ে এবং পরিবারকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, "আমাকে বলা হয়েছিল, আমরা যদি অভিযোগ প্রত্যাহার না করি, তাহলে আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে। আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে"।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেডি ও কংগ্রেস। এই ঘটনায় এক সুয়ো মুটো অভিযোগ দায়ের করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ঘটনার পর কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ও অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল এবং অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন