আবারও শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের কাঁওয়ার যাত্রা (Kanwar Yatra)। এবারও কাঁওয়ার যাত্রীদের হাতে নিগৃহীত হলেন রাস্তার ধারের এক ব্যবসায়ী। মুজফফরনগরের মীরাপুরে ওই ধাবায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায় কাঁওয়ার যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ওই ধাবা মালিক তাঁর পরিচয় গোপন করেছিলেন। সোমবার স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে একথা জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, মীরাপুরের সাইনি ভাট্টা চক-এর কাছে লাকি শুদ্ধ ধাবা ভোজনালয়ে রবিবার এই ভাঙচুর চালায় কাঁওয়ার যাত্রীরা। ধাবা মালিকের কাছে তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে এই হাঙ্গামা শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ বিতণ্ডার পর যাত্রীরা চলে যায়। ওই ধাবার এক কর্মী কাঁওয়ার যাত্রীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই ঘটনার ক’দিন আগে একইভাবে অন্য একটি ধাবায় হামলা চালিয়েছিল কাঁওয়ার যাত্রীরা। সেক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল, তাঁদের খাবারের সঙ্গে পেঁয়াজ দেওয়া হয়। এরপরেই ওই যাত্রীরা ধাবার বাসনপত্র, আসবাব ভাঙচুর করে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, গত ২৮শে জুন, মুজাফফরনগরের ৫৮ নম্বর জাতীয় সড়কে অবস্থিত পণ্ডিত জি বৈষ্ণব ধাবায় স্বামী যশবীর জি মহারাজ নামে এক ব্যক্তি এবং তাঁর বেশ কয়েকজন সহযোগী আসেন। ধাবায় কর্মরত তাজাম্মুল নামের এক মুসলিম ব্যক্তিকে তাঁর পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন।
তাজাম্মুল জানান, তাঁর আধার কার্ড হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি নিজের নাম গোপাল বলে দাবি করেন তিনি। তারপরই ওই ব্যক্তির প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় জানার অভিযোগ ওঠে ওই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
গত বছরেও কাঁওয়ার যাত্রার সময়েও বেশ কিছু ঝামেলা হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ সরকারের জারি করা এক নির্দেশিকার জেরে ওই ঝামেলা হয়েছিল বলে অভিমত বিরোধী দলগুলির। সেবার উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কাঁওয়ার যাত্রা পথে সমস্ত খাবার দোকান মালিক ও কর্মচারীদের তাঁদের পরিচয়পত্র দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
যোগী আদিত্যনাথ পরিচালিত উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের এই নির্দেশিকার কড়া সমালোচনা করে বিরোধীরা বলেন, এই নির্দেশের মাধ্যমে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছে সরকার। যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধী।
গত বছর ২২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কাঁওয়ার যাত্রা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছিল রাজনীতি। সেবার যাত্রাপথের দু'ধারে থাকা সমস্ত খাবার বিক্রেতাদের দোকানের সামনের বোর্ডে নিজেদের নাম লিখতে নির্দেশিকা জারি করেছিল উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। যোগী রাজ্যের পর এই একই নির্দেশিকা জারি করেছিল আরও দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড। প্রশাসনের এই নির্দেশিকা ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
বিরোধীদের দাবি, ধর্মীয় মেরুকরণের উদ্দেশ্যে এমন করতে বাধ্য করছে প্রশাসন। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। একাধিক মামলা দায়ের হয়। সেগুলি একত্রিত করে হওয়া শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সওয়াল করে বলেন, দোকানে মানুষ আসে মেনু দেখে। একজন ব্যবসায়ীর নাম দেখে কেউ খেতে আসে না। এই ধরণের আদেশ কোনও দিন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে কার্যকর করা উচিত নয়।
এরপর সুপ্রিম কোর্টে এস ভি এন ভাট্টি এবং বিচারপতি হৃষিকেশ রায়ের বেঞ্চ জানায়, এই নির্দেশ যদি পালন করা হয় তাহলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত লাগবে। দোকান ব্যবসায়ীদের নাম লিখতে বাধ্য করা উচিত নয়। তাই সরকারি নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন