
এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারক, বিচারপতি শেখর কুমার যাদবকে ‘ইমপিচ’ করার প্রস্তাব আনতে চলেছে রাজ্যসভার ইন্ডিয়া মঞ্চের সাংসদরা। তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করার দাবি জানাতে চলেছেন সাংসদরা। সাংসদদের অভিযোগ, ওই বিচারপতি ঘৃণাসূচক মন্তব্য, রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন এবং দাবি করেছেন সংখ্যাগুরুদের ইচ্ছা অনুসারে দেশ চলবে। ইতিমধ্যেই ওই মন্তব্য সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিচারপতি শেখর কুমার যাদব ওই আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। তাঁর ৩৪ মিনিটের বক্তব্যে তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক ভাষণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ। বিচারপতি যাদবের বিরুদ্ধে ১০ পাতার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। যেখানে সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্যকে উদ্ধৃত করা হচ্ছে।
বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিচারপতি হয়েও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্য বিতর্কে অংশ নিয়েছেন, যা তাঁর পদের মর্যাদা হানি করেছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি রাম মন্দির নির্মাণ এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়েও মত প্রকাশ করেন। বিচারপতি যাদব বলেন, আপনারা কেউ ভেবেছিলেন নিজের চোখে রামমন্দির দেখবেন? কিন্তু আপনারা দেখেছেন। ঠিক একইভাবে দেশ ইউনিফর্ম সিভিল কোডও দেখবে। সেই দিন খুব দূরে নয়। ভারত সংখ্যাগুরুদের ইচ্ছা অনুসারে চলবে। এটাকেই আইন বলে।
সূত্র অনুসারে, বুধবার ইন্ডিয়া মঞ্চের রাজ্যসভা সাংসদরা এই বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট মোশান আনতে চলেছেন। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই প্রস্তাব পেশ করা হবে।
রাজ্যসভায় কোনও বিষয়ে ইমপিচমেন্ট মোশান আনতে গেলে কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। জানা গেছে এখনও পর্যন্ত ৪০ জন সাংসদ ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন।
যেসব সাংসদরা ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন তাদের মধ্যে আছেন সাংসদ জয়রাম রমেশ, দিগ্বিজয় সিং, রেণুকা চৌধুরী, কপিল সিব্বল, জন ব্রিটাস, মনোজ কুমার ঝা, ভি শিবদাসন, এ এ রহিম, পি পি সুনীর, সাকেত গোখলে, সাগরিকা ঘোষ, জোস কে মানি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, এই প্রথম নয়, আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি শেখর কুমার যাদব। তিনি বলেছিলেন, "বেদ, মহাভারতের মতো ভারতের প্রাচীন গ্রন্থ, যা ভারতীয় সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করে এবং যার জন্য ভারত পরিচিত, সেখানে গোরুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গোরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করা উচিত এবং গো-রক্ষা হিন্দু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারের অংশ হওয়া উচিত। কারণ আমরা জানি যখন একটি দেশের সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসে আঘাত লাগে, তখন দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। গোরুর ভালো হলে দেশের ভালো হবে।"
২০২১ সালে আর এক মামলার শুনানিতে তিনি দাবি করেছিলেন, সংসদে আইন তৈরি করে হিন্দু ভগবান রাম, কৃষ্ণকে জাতীয় সম্মান দেওয়া উচিত। এঁরা শুধু হিন্দু সমাজের জন্য নয়, এঁরা বিশ্বের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন