
দিল্লিতে বাড়ল মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের খরচের সীমা। এর আওতায় রয়েছে মোবাইল ফোন কেনাও। এবার থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত মোবাইল ফোন কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিতে পারবেন। অন্য মন্ত্রীরা ১.২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন মোবাইল কেনার জন্য। দিল্লির বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের টাকা দু’হাতে খরচ করার অভিযোগ আনল বিরোধী আম আদমি পার্টি।
দীর্ঘ ১২ বছর পর দিল্লি সরকারের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবং বাকিদের খরচের উর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই বিজেপি সরকার এই অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত ১.৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মোবাইল ফোন কিনতে পারেন। অন্য মন্ত্রীরা ১.২৫ লক্ষ টাকার মোবাইল ফোন কিনতে পারবেন। গত ৯ জুলাই মন্ত্রীদের খরচের উর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়। এর আগে শেষবার ২০১৩ সালে মোবাইল কেনার খরচ বাড়ানো হয়েছিল। সেই থেকে এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর মোবাইল ফোনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার এবং বাকি মন্ত্রীদের জন্য ৪৫ হাজার টাকা সীমাবদ্ধ ছিল।
এছাড়া, সাধারণ পরিস্থিতিতে দু’বছর অন্তর মোবাইল বদলানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে দিল্লির মন্ত্রীদের। তবে মাঝে যদি সারানোর প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে মেরামতির খরচ যদি মোট দামের ৫০ শতাংশ হয়, সেক্ষেত্রে ফোন পাল্টানোর অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নতুন ফোন কেনা যাবে। সরকারের যুক্তি, যে হারে মোবাইলের দাম বেড়েছে, তাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফোনের বিল, ব্রডব্যান্ড বিল বাবদ খরচের ঊর্ধ্বসীমাও বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রীদের পাশাপাশি জিএডির আদেশে সিনিয়র আমলাদের জন্য বর্ধিত ভাতা আরও বাড়ানো হয়েছে। মুখ্য সচিব, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এবং প্রধান সচিবরা এখন ১ লক্ষ টাকা থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের মোবাইল কিনতে পারবেন, আগে যেটা ছিল ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া মন্ত্রীদের সচিবদেরও নতুন নির্দেশের আওতায় আনা হয়েছে। এখন থেকে মোবাইল ফোনের জন্য ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন তাঁরা। নতুন নির্দেশিকায় যুগ্ম ও উপ-সচিবদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা যথাক্রমে ৩০,০০০ এবং ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের মোবাইল কিনতে পারবেন।
দিল্লি সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। আম আদমি পার্টির দিল্লির সভাপতি সৌরভ ভরদ্বাজ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “দিল্লি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের অভিনন্দন। মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের জন্য ১.৫ লক্ষ এবং ১.২৫ লক্ষ টাকার ফোন এবং সীমাহীন বিলের প্রস্তাব পাস হয়েছে। সত্যিই উন্নয়ন হচ্ছে, অন্তত কেউ না কেউ তো তা পাচ্ছে"।
এরপরেই সৌরভ কটাক্ষ করে বলেন, “যদি বেসরকারি স্কুলের ফি বৃদ্ধি পায় তো কী হয়েছে? শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা থাকলে কী এমন হবে? বৃষ্টির কারণে যদি ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট থাকে তো থাকবে, যদি হাজার হাজার বিধবাদের পেনশন কেটে দেওয়া হয় তো কী এমন হয়েছে? যদি একজন দরিদ্র ব্যক্তির বাড়ি ভেঙে ফেলা হয় তাহলে ক্ষতি কী?"
তিনি বলেন, "নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল মহিলাদের প্রতি মাসে ২৫০০ টাকা করে দেবে বিজেপি। মেয়েদের ল্যাপটপ দেওয়ার কথা ছিল, কথা ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির। সেসব না করে জনগণের টাকায় মন্ত্রীদের দামি ফোন কেনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।"
যদিও এই প্রসঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শঙ্কর কাপুরের যুক্তি, দামি ফোনে ডেটা বেশি পাওয়া যায়। সরকারি কাজ সংক্রান্ত তথ্য ও নথি মজুত রাখা যায়। কেজরিওয়ালের আমলে যে ১.৪৩ কোটি টাকার গাড়ি কেনা হয়েছিল, তা নিয়ে উনি আগে জবাবদিহি করুন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন