
প্রয়াত হলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক (Satyapal Malik)। গত ১১ মে থেকে তিনি নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ১০ নাগাদ মৃত্যু হয় সত্যপাল মালিকের। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব কেএস রানা। কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল।
গত ৮ জুন সত্যপাল মালিক নিজের শারীরিক অবস্থার কথা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। যেখানে তিনি নিজেকে ‘গুরুতর’ অসুস্থ বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুদিনের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ঠিক ৬ বছর আগে, ২০১৯ সালের এই দিনেই তিনি রাজ্যপাল থাকাকালীনই জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করা হয়েছিল।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সত্যপাল মালিক তাঁর সোজাসাপটা মন্তব্য, রাজনৈতিক দলবদল এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের বাঘপত জেলার হিসাওয়াড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মালিক মীরঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে তিনি সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং মীরঠ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
সাম্যবাদী নেতা রাম মনোহর লোহিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত মালিক সর্বপ্রথম চরণ সিংয়ের ভারতীয় ক্রান্তি দলের প্রার্থী হিসেবে বাঘপত থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে লোক দল গঠিত হলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৮০ সালে মালিক রাজ্যসভার সদস্য হন এবং ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন। তবে ১৯৮৭ সালে বোফর্স কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে তিনি দল ছাড়েন এবং ভিপি সিংয়ের সঙ্গে জন মোর্চা গঠন করেন।
১৯৮৯ সালে তিনি আলিগড় থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভিপি সিং সরকারের সময় পর্যটন ও সংসদীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, গোয়া এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মালিক। তাঁরই অভিযোগের ভিত্তিতে কিশ্তওয়ারে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির মামলা রুজু হয়, যেটিতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI) তাঁর বিরুদ্ধেই চার্জশিট দাখিল করে।
২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর ছিলেন সত্যপাল মালিক। এই সময়কালে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পাশ করার জন্য, তাঁর কাছে ৩০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব এসেছিল বলে নিজেই অভিযোগ করেছিলেন সত্যপাল মালিক। এর মধ্যে একটি ছিল কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যটি রিলায়্যান্স কোম্পানির একটি ইনশিওরেন্স সংক্রান্ত। ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এক আরএসএস নেতাও।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন সত্যপাল মালিক। পুলওয়ামা হামলার সময় জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন তিনি। সিআরপিএফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের "অযোগ্যতা" এবং "অবহেলার" ফলেই সেনা কনভয়ে হামলা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেছিলেন। এমনকি সরকারের ত্রুটিগুলি নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁকে মুখ খুলতে নিষেধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং এনএসএ অজিত ডোভাল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন