২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ দুর্নীতিকান্ডে নাম উঠে এসেছিল বিভাস অধিকারীর। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে গ্রেফতার হবার পর তাঁর নাম সামনে এনেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা অধুনা জামিনে মুক্ত কুন্তল ঘোষ। রবিবার নয়ডার গৌতম বুদ্ধ নগর পুলিশ ভুয়ো থানা চালানোর অভিযোগে যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তার মধ্যে আছেন নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে নাম জড়ানো প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারী এবং তার ছেলে অর্ঘ্য অধিকারী।
রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হবার পর কুন্তল ঘোষ সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, বিভাস অধিকারীকেও জেরা করা উচিত। উনিও এর সাথে যুক্ত আছেন। অবশ্য কুন্তল ঘোষ ছাড়াও, সেই সময় বিভাস অধিকারীর নাম শোনা গেছিল গোপাল দলপতি ও তাপস মণ্ডলের মুখেও। গোপাল জানিয়েছিলেন, আমি তাপস মণ্ডলের মুখেই বিভাস অধিকারীর নাম জানতে পারি। আমার থেকে বেশি ঘনিষ্ঠ বিভাস।
প্রসঙ্গত, রবিবার নয়ডা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বিভাস অধিকারীর বাড়ি বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের শীতলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছিল, বিভাস প্রথম থেকেই ধর্মীয় কাজে যুক্ত ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বিভাস অধিকারী। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে। পরে তিনি নলহাটি ২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হন।
নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে নাম জড়ানোর পর কলকাতায় বিভাস অধিকারীর অফিস সিল করে আধিকারিকরা। সেই অফিস থেকেই নাকি বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েসনের যাবতীয় কাজ করতেন বিভাস। তল্লাশির কিছুদিন আগেই সেই অফিসের বাইরে ধর্মীয় কাজের সাথে যুক্ত একটি বোর্ড লাগানো হয়। ২০২৩-এর ১৫ এপ্রিল বিভাস অধিকারীর নলহাটির বাড়ি ও আমহারস্ট স্ট্রীটের ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। সূত্রের খবর, কলকাতার এই ফ্ল্যাট থেকেই নিয়োগ দুর্নীতির কাজ পরিচালিত হতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল প্রায়ই বিভাস চৌধুরী ওই ফ্ল্যাটে যেতেন। তাঁর সাথে আরও অনেকে থাকতেন। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একাধিক ট্রাঙ্ক তাঁর সাথে নিয়ে যেতেন। তল্লাশি চালানোর পর ওই ফ্ল্যাট সিল করে দেন আধিকারিকরা।
যদিও সেই সময় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন বিভাস। তিনি জানিয়েছিলেন, কুন্তল, দলপতি এদের কাউকেই আমি চিনি না। আর আমার সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। চোর ডাকাতরা বাঁচার জন্য অনেকের নাম করে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। রাজনীতির সাথে এখন আমার সরাসরি যোগাযোগ নেই। বর্তমানে কেন্দ্রীয় একটি সংস্থার ডিরেক্টর পদে কাজ করছি।
যদিও বিভাস অধিকারী সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছিল, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম থেকে বহু চাকরিপ্রার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। ওই সব জেলাতেও বিভাস অধিকারীর একাধিক জমি রয়েছে। জমির সাথেও নিয়োগ দুর্নীতির টাকা জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন