২০১৩ সালের ২০ আগস্ট। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও প্রাতঃভ্রমণে গেছিলেন ডঃ নরেন্দ্র দাভোলকর। ওইদিনই পুণের ওমকারেশ্বর মন্দির অঞ্চলে দুই অজ্ঞাতপরিচয় মোটর সাইকেল আরোহী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। আততায়ীদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির (MANS) কর্ণধার, ৬৭ বছর বয়সী দাভোলকর। ঘটনার পর ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মূলচক্রীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
নরেন্দ্র দাভোলকরের মেয়ে মুক্তা দাভোলকর এই প্রসঙ্গে ২০২৩ সালে জানিয়েছিলেন, ‘১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মূল চক্রীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও আমি আশা রাখি বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে।”
চলতি বছরে ২০ আগস্ট, নরেন্দ্র দভোলকারের স্মৃতিতে সারা দেশে পালিত হচ্ছে 'জাতীয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিবস। নিহত ডঃ দাভোলকারের মেয়ে মুক্তা দাভোলকর সম্প্রতি মহারাষ্ট্র কুসংস্কার নির্মূল কমিটির পক্ষে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে জানিয়েছেন, “মহারাষ্ট্র কুসংস্কার নির্মূল কমিটি আগামী ১৩ থেকে ২০ আগস্ট সপ্তাহে ড. নরেন্দ্র দভোলকারের স্মৃতি উপলক্ষে, সচেতনতা সপ্তাহ হিসাবে পালিত হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ড. নরেন্দ্র দভোলকারের চিন্তার পোস্টার প্রতিদিন শেয়ার করা হবে। আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌছানোর অনুরোধ রইল।”
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অন্ধবিশ্বাস বিরোধী যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরকে হত্যা করা হয় ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট। এরপরেই ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় সিপিআই নেতা গোবিন্দ পানসারেকে এবং ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর খুন করা হয় যুক্তিবাদী এম এম কালবুরগিকে। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর খুন হন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। এই চার হত্যাকান্ডের সঙ্গেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের যোগ ছিল বলে অভিযোগ।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতৃত্ব, যুক্তিবাদী ডঃ দাভোলকরকে হত্যার মূল চক্রী দক্ষিণপন্থী সনাতন সংস্থার পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যদিও তখনও পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দুই মূলচক্রীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ২০১৪ সালে পুনে পুলিশের কাছ থেকে এই মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
২০২৪ সালের মে মাসের শেষের দিকে সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত সহ ৩ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয় বিশেষ দায়রা আদালত। অন্য ২ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন অ্যাডিশনাল সেশন জাজ।
বিচারক পি পি যাদব এই প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তে শচীন অন্ধুরে এবং শারদ কালস্করের বিরুদ্ধে হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি ৩ অভিযুক্ত ডঃ বীরেন্দ্র সিং তাওড়ে, সঞ্জীব পুনালেকার এবং বিক্রম ভাভেকে প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করা হলো।
২০২১ সালে পুণে আদালত এই হত্যাকান্ডের মূল চক্রী হিসেবে বীরেন্দ্র সিং তাওড়েকে অভিযুক্ত করেছিল। ডঃ বীরেন্দ্রসিং তাওড়ে, শচীন অন্ধুরে, শারদ কালস্কর এবং বিক্রম ভাবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির এবং ইউএপিএর অধীনে হত্যা, হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়। পঞ্চম অভিযুক্ত, আইনজীবী সঞ্জীব পুনালেকরের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন