মণিপুরের কাংপোকপি এলাকায় দুই কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটানোর ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল কেন্দ্র। এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতের কাছে মণিপুর ভিডিও কাণ্ডের শুনানি-সহ গোটা মামলা মণিপুরের বাইরে অন্য কোনও রাজ্যে করার কথা অনুরোধ করেছে কেন্দ্র।
গত ১৯ জুলাই মণিপুরের প্রায় দু’মাস পুরনো একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে দেখা যায় উন্মত্ত জনতার এক দল দুই মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে (এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)।
এই ‘নৃশংস’ ও ‘অমানবিক’ ঘটনার ভিডিও দেখে শিউরে উঠে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে বিশিষ্ট জন ও সাধারণ মানুষ একসুরে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মণিপুর নিয়ে ৭৭ দিনের নীরবতা ভেঙে বলেন, “এই ঘটনায় দেশবাসীর মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গেছে। দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না, সবার শাস্তি হবে।”
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঠিক পরের দিন সুপ্রিম কোর্টও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এই নিয়ে জানিয়েছিল, “সন্ত্রাস ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে মহিলাদের ব্যবহার করা সাংবিধানিক গণতন্ত্রে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
একইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের তরফে দেশের সলিসিটর জেনারেলকে জানানো হয়েছিল, এই ঘটনায় মণিপুর সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টকে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ কোর্টে হবে। মণিপুর নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হল, তা আদালতকে ২৮ জুলাইয়ের আগে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার আদালতের সেই নির্দেশ মেনেই ঘটনার তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজুয় কুমার ভাল্লা আদালতে জানিয়েছেন, “মণিপুর সরকারের অনুমতি নিয়েই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “মণিপুরের আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ সে রাজ্যের সরকারের হাতেই রয়েছে। তা সত্ত্বেও, ভারত সরকার মণিপুরবাসীর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তার পাশাপাশি রাজ্যের ঘটনাক্রমের উপর নজর রাখছে।” আবার, এই ঘটনা নিয়ে সিবিআইয়ের চার্জশিট দাখিল করার ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের ওই আড়াই মাসের পুরনো ‘অমানবিক’ ঘটনার অভিযোগ পেয়েও প্রথমে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯ জুলাই ভিডিও ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছে মণিপুর পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে রয়েছে একজন নাবালকও। পুলিশ সূত্রে খবর, পুরো ঘটনার ভিডিও যে করেছে তাকেও গত শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেই মোবাইলটিও।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।