
দিল্লি হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার নাম ২০১৮ সালের একটি চিনিকলের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি মামলার এফআইআরে রয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি নিজের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার হওয়ার পর ফের বিতর্কে জড়ালেন ওই বিচারপতি।
২০১৮ সালে সিম্বাওলি সুগার মিলসের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ উঠেছিল। যার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। সেই সময় চিনিকলের নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে ছিলেন যশবন্ত ভার্মা। তিনি ছাড়াও এফআইআরে থাকা আর এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন সিম্বাওলি সুগার মিলসের তৎকালীন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গুরপাল সিং, যিনি পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের জামাই। সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি ইডিও এই মামলায় যুক্ত হয়।
ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অফ কমার্স (ওবিসি) ওই চিনিকলের বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপির অভিযোগ তোলে। ওবিসি জানায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ব্যাঙ্কটি ৫,৭৬২ জন কৃষকের জন্য ১৪৮.৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, যা কৃষকদের সার ও বীজ কেনার জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল। তবে, তদন্তে উঠে আসে যে এই অর্থ কৃষকদের হাতে না গিয়ে সরাসরি সিম্বাওলি সুগার মিলসের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়।
ব্যাংকের অভিযোগ অনুযায়ী, কোম্পানিটি ভুয়ো KYC নথি ব্যবহার করে তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে। ২০১৫ সালের মার্চে ওবিসি এই ঋণকে জালিয়াতি বা ভুয়ো ঋণ বলে ঘোষণা করে। যার ফলে ব্যাঙ্ক ৯৭.৮৫ কোটি টাকা হারায় এবং ১০৯.০৮ কোটি টাকা বকেয়া থেকে যায়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট চিনিকলের ‘ঋণ প্রতারণা’-র ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সাতটি ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে নতুন করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সিম্বাওলি সুগার মিলস ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৯০০ কোটি টাকার ঋণ পেলেও তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় এবং একাধিক ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা এতে জড়িত ছিলেন।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিবিআই নতুন করে তদন্ত শুরু করে। তবে, মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাংলোতে আগুন লাগে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা দমকলে এবং পুলিশে খবর দেন। দমকল বিভাগের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর ওই বাংলোতেই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা দেখতে পান। তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানান। সেই সময় বাংলোতে ছিলেন না বিচারপতি।
খবরটি প্রকাশ্যে আসার পরই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না কলেজিয়ামের একটি সভা ডেকেছিলেন। সভায় ঠিক হয় বিচারপতি ভার্মাকে তাঁর পুরনো কর্মক্ষেত্র এলাহাবাদ হাইকোর্টে ফেরত পাঠানো হবে। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁকে কোথাও বদলি করা হয়নি বলেই জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন