* আগামী আদমশুমারিতে জাতিগত আদমশুমারি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
* সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে।
* বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসকে কটাক্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের।
আসন্ন আদমশুমারিতে জাতিগত গণনা করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এদিন তিনি জানিয়েছেন, আগামী আদমশুমারিতে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে জাতিগত আদমশুমারির বিষয়টিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশব্যাপী জাতিগত আদমশুমারি এবং উচ্চতর সংরক্ষণের সীমা ঘোষণা করা হবে। এরপরেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস। আজই সন্ধ্যেয় এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে চলেছেন রাহুল গান্ধী।
ওই সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী আরও বলেন, “এটা ভালোভাবেই বোঝা যায় যে কংগ্রেস এবং তার ইন্ডিয়া মঞ্চের অংশীদাররা জাতিগত আদমশুমারিকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সংবিধানের ২৪৬ অনুচ্ছেদের ইউনিয়ন তালিকার ৬৯ নম্বর ক্রমিক অনুচ্ছেদে আদমশুমারির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং যা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রের বিষয়। কিছু রাজ্য জাতিগত গণনার জন্য সমীক্ষা করেছে। কিছু রাজ্য এটি ভালোভাবে করলেও, অন্যরা কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অস্বচ্ছ উপায়ে এই ধরনের সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।”
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। যে বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। মূলত শিলচর থেকে শিলং হাইস্পিড করিডর, জাতিগণনা এবং আখের মূল্যের উপর এই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, আসাম ও মেঘালয়কে যুক্ত করার জন্য শিলচর থেকে শিলং পর্যন্ত হাইস্পিড হাইওয়ে করিডরের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। ১৬৬ কিমির চার লেনের রাস্তা তৈরি হবে যার খরচ হবে আনুমানিক ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জাতিগত আদমশুমারি নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, "কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা বারবার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে জাতিগত আদমশুমারি ব্যবহার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে পরিচালিত সমস্ত আদমশুমারিতে জাত অন্তর্ভুক্ত ছিল না।"
তিনি আরও বলেন, “২০১০ সালে, প্রয়াত ডঃ মনমোহন সিং লোকসভায় আশ্বাস দিয়েছিলেন যে জাতিগত আদমশুমারির বিষয়টি মন্ত্রিসভায় বিবেচনা করা উচিত। এই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি দল একই সুপারিশ করেছিল। তা সত্ত্বেও, কংগ্রেস সরকার জাতিগত আদমশুমারি নয় বরং একটি জাতিগত সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।”
পাশাপাশি আখের মূল্য নিয়ে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের জন্য একাধিক কাজ করেছেন। সিসিইএ ২০২৫-২৬ (অক্টোবর-সেপ্টেম্বর) চিনি মরসুমের জন্য আখের ন্যায্য ও লাভজনক মূল্য (এফআরপি) ৩৫৫ টাকা/কুইন্টাল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর জাতিগত জনগণনার দাবি জানিয়ে লোকসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জানিয়েছিলেন, "কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নে জাতিগত শুমারিকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করা হবে এবং বিজেপিকে জাতিগত শুমারি করতে বাধ্য করা হবে। দেশ যেভাবে চায় আমরা ক্ষমতায় আসার পরে সেভাবেই তা করব। বিজেপি ব্যর্থ হলে তারা ছেড়ে দিক।"
তিনি আরও বলেছিলেন, "ভারতের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এটিকে সমর্থন করে। কিছু কিছু ব্যক্তি মানুষের মতামত কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করবে। আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তি নই এবং আমরা কাউকে জোর করব না।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন