
* ২০২১ সালে পেগাসাস কান্ডে শোরগোল পড়ে রাজনৈতিক মহলে।
* এই প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতে একাধিক জনস্বার্থ মামলা করা হয়।
* অভিযোগ ছিল, দেশের একাধিক শীর্ষ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ফোনে পেগাসাস সফটওয়ার ব্যবহার করে আড়ি পাতা হয়েছিল।
যদি আমজনতা বা কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার হয় তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। তবে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে স্পাইওয়ার ব্যবহারে কোনও অন্যায় নেই। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ পেগাসাস সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় একথা জানিয়েছে।
বুধবার পেগাসাস সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চে। পর্যবেক্ষণে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, “বর্তমানে আমরা যে অবস্থার মধ্যে রয়েছি, তাতে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। কোনও দেশ যদি নিরাপত্তার স্বার্থে আড়ি পাতার সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাহলে ভুলটা কোথায়? স্পাইওয়্যার ব্যবহারে কোনও সমস্যা নেই। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আপোস করা যায় না। তবে সাধারণ নাগরিক, যাদের গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে, তাঁরা সংবিধানের অধীনে সুরক্ষিত থাকবে।
আবেদনকারীর পক্ষে এদিন আদালতে উপস্থিত আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি তোলেন। সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শুনানিতে বলেন, “জঙ্গিদের কোনো গোপনীয়তার অধিকার থাকতে পারে না”। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, “দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে যে রিপোর্টের সঙ্গে, তা প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি জানতে চান, তাঁর নাম আছে কি না, আলাদা ভাবে তাঁকে জানানো যাবে”।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বাদল অধিবেশনের আগে প্রকাশ্যে আসে পেগাসাস কান্ড। অভিযোগ ওঠে, ইজরায়েলি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের ফোন হ্যাক করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শীর্ষ আদালত।
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী সহ বিরোধী শিবিরের তাবড় নেতা, সাংবাদিক এমনকি কেন্দ্রের মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যাস ব্যবহার করে আড়িপাতার অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে কয়েক বছর আগে তোলপাড় হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর, শীর্ষ আদালতে একাধিক পিটিশন দাখিল করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট এমএল শর্মা, সিপিআইএম রাজ্যসভা সাংসদ জন ব্রিটাস, হিন্দু গ্রুপ অফ পাবলিকেশনের পরিচালক এন রাম এবং এশিয়ানেটের প্রতিষ্ঠাতা শশী কুমার, এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া, সাংবাদিক রূপেশ কুমার সিং, ইপসা শতক্ষী, পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, এসএনএম আবিদি এবং প্রেম শঙ্কর ঝা প্রমুখ।
প্রয়াত সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পেগাসাস প্রসঙ্গে দাবি করেছিলেন, “মোদি সরকারকে হলফনামায় ব্যাখ্যা করতে হবে কেন তারা এই সাইবার অস্ত্র কিনেছে, কে এর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, কাদের ওপর ব্যবহার করা হবে কীভাবে তা ঠিক হয়েছিল এবং এই রিপোর্টগুলো কারা পেয়েছে?” ইয়েচুরি আরও বলেন, এই ধরনের একটি জটিল বিষয়ে নীরব থাকার অর্থ অপরাধমূলক কার্যকলাপ স্বীকার করে নেওয়া। নিজের ট্যুইটের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনও শেয়ার করেছিলেন ইয়েচুরি।
অন্য এক ট্যুইটে ইয়েচুরি লেখেন, আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য জনগণের টাকায় পেগাসাস সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্ট এবং সংবেদনশীল বিষয়ে তদন্তকারী আধিকারিকদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি গণতন্ত্রের মারাত্মক বিপর্যয়ের সমান। যা গ্রহণীয় নয়। এই সরকারকে যেতেই হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন