
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে দু’দিন দেশজুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যাঙ্ক অফিসার সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন (আইবক)। অভিযোগ, ব্যাঙ্কে কর্মীর তুলনায় কাজ অনেকটাই বেশি। তাই কর্মী নিয়োগ এবং প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের দাবি তুলে ফেব্রুয়ারির ২৪ এবং ২৫ ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আইবক।
ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, ২০১৪ সালে মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সাধারণ কর্মী নিয়োগ কমেছে ১.১৪ লক্ষ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ছেন ব্যাঙ্ক কর্মী-অফিসারেরা। বিপুল চাপ সামলাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক কর্মী।
এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কের সাধারণ কর্মীদের সংগঠন এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর, আইবক-এর রাজ্য সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় এবং অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাসের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে কর্মীদের উপর নতুন নানা ধরণের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় ব্যাঙ্কিং কাজকর্মের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক সরকারি প্রকল্পের কাজ। কিন্তু সেই পরিমাণে হয়নি নিয়োগ।
এবিষয়ে শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ব্যাঙ্কের কাজের সঙ্গে সরাসরি সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে। তাতে দক্ষতা লাগে। অথচ অফিসার এবং কর্মীদের বহু পদ খালি হয়ে পড়ে আছে। দক্ষভাবে সব কাজ চলবে কী করে? পাশাপাশি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিএ) সঙ্গে ইউনিয়নগুলির চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও পাঁচ দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করা হচ্ছে না। এর জন্য আইবিএ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ অনেক দিন আগে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র তা কার্যকর করছে না। এগুলি-সহ একাধিক দাবি পূরণ হচ্ছে না বলেই ফেব্রুয়ারিতে টানা দু’দিন ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা’।
গত ১০ বছরে ব্যাঙ্কে বহু কর্মী অবসর নিয়েছেন। অনেকে চাকরি ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু কর্মী নিয়োগ হয়েছে সামান্যই, দাবি রাজেনের। তাঁর বক্তব্য, ‘এর ফলে নিট হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শিল্পে এখন অফিসার নন এমন সাধারণ কর্মীদের ১.১৪ লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়েছে। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের উপর চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। গ্রাহক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। পরিষেবা ঠিক মতো না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের একাংশ কর্মীদের উপর চড়াও হচ্ছেন। পাঁচ দিনের সপ্তাহ চালু ইত্যাদি দাবিতে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।'
তিনি জানান, ১৫ জানুয়ারি কলকাতায় সংগঠনের কর্মকর্তাদের বৈঠক হবে। সেখানেই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে। আইবকের ডাকা ধর্মঘটকে সমর্থন করছেন তাঁরা।
সঞ্জয় দাসের আক্ষেপ, ‘বহু কর্মী অতিরিক্ত চাপ সামলাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষত ব্যাঙ্কের কাজে যেহেতু লক্ষ্য পূরণ করতে হয়। অনেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন। এটা ঠিক হচ্ছে না। তার উপর নতুনদের দক্ষতা বাড়ানোর সময়ও মিলছে না। যেটা খুব জরুরি। ব্যাঙ্ক কর্মীদের ধর্মঘটের ফলে গ্রাহকদের কিছু অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু আশা করব গ্রাহকেরা বুঝবেন, তাঁদের স্বার্থ রক্ষাও ধর্মঘটের অন্যতম উদ্দেশ্য’।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন