
‘ভোট চুরি’র (Vote Chori) মত ‘নোংরা শব্দবন্ধ’ (Dirty Phrases) ব্যবহার না করে সঠিক প্রমাণ সহ অভিযোগ করুন। ভোটারের তথ্য গরমিলের অভিযোগ তুলে লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) লাগাতার আক্রমণের সামনে বৃহস্পতিবার এভাবেই এক বিবৃতিতে নিজেদের বক্তব্য জানালো দেশের নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।
এদিনের বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, যদি কারোর কাছে কোনও প্রমাণ থাকে যে কোনও ব্যক্তি কোনও নির্বাচনে একাধিকবার ভোট দিয়েছে সেক্ষেত্রে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ECI) কাছে লিখিত এফিডেবিট সহ জমা দেওয়া উচিত। কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভারতের সব ভোটারকে ‘চোর’ বলে দাগিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কমিশন আরও জানিয়েছে, ১৯৫১-৫২ সাল থেকেই দেশে ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ (One Person, One Vote) চালু আছে।
নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, ভারতীয় ভোটারদের উদ্দেশ্য করে ‘ভোট চুরি’র মত ‘নোংরা শব্দবন্ধ’ ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচার তৈরির চেষ্টা শুধু কোটি কোটি ভারতীয় ভোটারের ওপর সরাসরি আক্রমণ তাই নয়, বরং দেশের লক্ষ লক্ষ নির্বাচন কর্মীর সততা নিয়েও প্রশ্ন তোলা।
গত ৭ আগস্ট দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে একাধিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। গত ২৪ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই তথ্য তুলে ধরবেন বলে আগাম জানিয়েছিলেন। ৭ আগস্টের সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী দাবি করেন, গত ১০-১৫ বছর ধরে নির্বাচনে ভোট চুরি হয়ে আসছে। যার সুবিধা পেয়েছে বিজেপি।
সাংবাদিক সম্মেলন করে তথ্য ও পরিসংখ্যান সহ একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে 'ভোট চুরি' হয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভোটে যে ফলাফল এসেছে, তা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আশঙ্কাকেই সত্যি প্রমাণ করছে। এরপর থেকে গত এক সপ্তাহে বারবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী 'ভোট চুরি' হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
গত বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে কংগ্রেস সাংসদ জানান, এক লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে কংগ্রেস নিশ্চিত হয়েছে যে এক লাখেরও বেশি ভোটারের নাম একাধিক জায়গায় আছে। এছাড়াও ভুল ঠিকানা এবং গণহারে ভোটারের নাম তোলা হয়েছে মহাদেবপুরায়। এটা শুধু একটি রাজ্যের ঘটনা নয়। আমরা নিশ্চিত, গোটা দেশজুড়ে এই রকম অপরাধ চলছে।” তাঁর অভিযোগে উঠে আসে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার কথাও।
ওই সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি জানান, "একদিন তো বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবে। সেদিন আপনাদের ছাড়বো না। কারণ আপনারা দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করছেন। যে সব নির্বাচনী আধিকারিক এই কাজের সাথে যুক্ত আছেন, তা সে আপনি শীর্ষ পদেই থাকুন বা নীচু স্তরে, আমাদের তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ আপনারা প্রতারণা করছেন ভারতের জনগণের সাথে"।
নির্বাচন কমিশনের এই বিবৃতি এমন সময় এসেছে যখন কংগ্রেস তাদের 'ভোট চুরি' অভিযোগের প্রচার জোরদার করেছে এবং আগামী ১৪ আগস্ট "লোকতন্ত্র বাঁচাও" প্রতিবাদ মিছিল করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন