Bihar SIR: 'কমিশন যে সব নথি চাইছে সবই ভোটার-বান্ধব', এসআইআর নিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

People's Reporter: মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, "আধার কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না। পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট দুই শতাংশের কম ভারতীয়ের রয়েছে। বাকি যা নথি চাওয়া হচ্ছে তা-ও সকলের কাছে নেই।"
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

এসআইআর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কেন ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে? বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision - SIR) সংক্রান্ত মামলায় বুধবার এমনই প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত জানায়, এবিষয়ে সওয়াল করা যেতে পারে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর হতে পারে এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আপাতত এই প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদন জানান আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্টে বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে। মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে জানিয়েছিল, আধার নথি কোনও নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। বুধবার ফের ছিল এই মামলার শুনানি। এদিন সেই প্রসঙ্গে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, "আধার কেন গ্রহণ করা হবে না তার বিপক্ষে যুক্তি আমরা বুঝতে পেরেছি।’’ তিনি জানান, "কমিশন যে সব নথি চাইছে তা ভোটার-বান্ধব।’’

বিচারপতি বাগচী জানতে চান, নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য কত ধরনের নথি ব্যবহার করা যেতে পারে? বিচারপতি কান্ত বলেন, ‘‘কেউ যদি বলত ওই ১১টি নথির সব চাই, তা হলে সেটা ভোটার বিরোধী হত। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে ১১টির মধ্যে যে কোনও একটি দেওয়ার কথা। তবে আপত্তি কোথায়?’’

এরপরেই এই নথি প্রসঙ্গে কেন আপত্তি, তার ব্যাখ্যা দেন মামলাকারীদের আইনজীবী মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, "আধার কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না। জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ প্রায় সকলের বাড়িতে রয়েছে। কিন্তু সেগুলি বিবেচনা করা হয়নি। পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট দুই শতাংশের কম ভারতীয়ের রয়েছে। বাকি যা নথি চাওয়া হচ্ছে তা-ও সকলের কাছে নেই। যদি কারও জমি না থাকে, তবে তালিকার ৫, ৬, ৭ নম্বর নথি বাদ যাবে।’’ এই বিষয় উল্লেখ করে আইনজীবী সিঙ্ঘভির মন্তব্য, ‘‘আমি ভাবছি, বিহারে কত জন যোগ্য হবেন? বিহারে রেসিডেন্স সার্টিফিকেট (স্থায়ী ভাবে বসবাসের শংসাপত্র) বলে কিছু নেই"।

এরপরেই সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, কমিশনের তৈরি ভোটার কার্ডই এখন আর গ্রহণ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, "বিহারের বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কমিশন যে নথি চেয়েছে তা নেই। ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪ কোটি জন্ম সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৩৬ লক্ষের কাছে পাসপোর্ট রয়েছে"।

এরপরেই বিচারপতি কান্তের মন্তব্য, ‘‘বিহার থেকে সবচেয়ে বেশি আইএএস অফিসার আসে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ না থাকলে এটা কি সম্ভব?’’ আইনজীবী সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘সেই সংখ্যাটা কয়েকটি শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা এসআইআরের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু ভোটের আগে কেন? পরে সারা বছর ধরে করা যেত।’’

বিহারের এসআইআর চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গেও নোটিশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই বিষয় জানিয়েছে কমিশন। এদিন শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তোলেন মামলাকারীর আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণ। তিনি বলেন, "সংবিধান সব ব্যক্তিকে ভোটার হওয়ার অধিকার দিয়েছে। জনপ্রতিনিধি আইনে ভোটারের সংজ্ঞা দেওয়া রয়েছে"।

এরপরেই খসড়ায় নাম বাদ প্রসঙ্গ নিয়ে আইনজীবী গোপালের মন্তব্য, ‘‘কমিশন গণহারে নাম বাদ দিয়েছে। ভোট দেওয়া আমার অধিকার। ভারত নিজেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে গর্ব করে। কমিশন কী ভাবে ভোটারদের সঙ্গে এই রকম ছেলেখেলা করতে পারে?’’

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের বদলে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ধরা কেন ধরা হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে মামলাকারীর আইনজীবী গোপালের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘‘এটা (এসআইআর) প্রথম বারের জন্য করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সকল ভোটার তালিকা বাতিল করা যেত। কিন্তু কমিশন তা করছে না। তারা ২০০৩ সালকে ‘মাইলস্টোন’ হিসাবে ধরে নিচ্ছে"।

বিচারপতি বাগচী মামলাকারীর আইনজীবীকে বলেন, ‘‘২০০৩ সাল কেন? কেন ২০২৫ সালের জানুয়ারির তালিকা ধরা হবে না? আপনারা এই বিষয়ে সওয়াল করতে পারেন।’’

এরপরেই ফের বাংলার প্রসঙ্গ টেনে মামলাকারীর আইনজীবী গোপালের সওয়াল, "১০ জুলাই যখন এই মামলা শুনানির জন্য ওঠে তখন ন্যায় বিচারের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ব্যবহার করা হোক। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। তবে আদালতের বলার পরেও ভোটার কার্ড বিবেচনা করা হয়নি।’’ এরপরেই এই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার আবেদন জানান তিনি। তাতে আদালতের প্রশ্ন, তবে কি কখনই কোথাও এই প্রক্রিয়া করা যাবে না? আইনজীবী জানান, সংশোধন অবশ্যই হওয়া উচিত, কিন্তু এসআইআর প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হোক।

এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ‘‘আমরা কখনই মৃতদের ফিরিয়ে আনতে পারব না’’ মামলাকারীর আইনজীবীর পাল্টা সওয়াল, ‘‘যদি কেউ মারা যান, তবে তার নাম অপসারণ করতে পারে কমিশন। তবে যাঁদের নাম ইতিমধ্যেই বাদ দেওয়া হয়েছে, আগে তাঁদের নাম যুক্ত করা হোক, তার পরে এসআইআর প্রক্রিয়া চলতে পারে।’’ আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে ফের এই মামলার শুনানি।

সুপ্রিম কোর্ট
Varanasi: বারাণসীর ভোটার তালিকায় অবিবাহিত ব্যক্তির ৫০ সন্তান - কংগ্রেসের অভিযোগে ক্ষুব্ধ স্বামীজী
সুপ্রিম কোর্ট
Bihar SIR: বিহারে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় মৃত দুই ভোটারকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির যোগেন্দ্র যাদব

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in