
সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারি ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলী অ্যাংমো। তাঁর স্বামীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর লেহ-তে বাস্তবের 'র্যাঞ্চো'কে তাঁর নিজের বাসভবন থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারি অভিযানে নেতৃত্ব দেন লাদাখ পুলিশের ডিজি এসডি সিংহ জামওয়াল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।
সোনমের স্ত্রী সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেছি। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল তারপরও আমার কাছে ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য, তাঁর অবস্থা বা আটকের কারণ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই’।
গীতাঞ্জলী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবীন্দ্র গুপ্তকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে সোনমকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গীতাঞ্জলী প্রশ্ন তোলেন, "আমার স্বামীকে যেখানেই আটক করা হোক না কেন, ফোনে এবং ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে দেখা করার বা কথা বলার অধিকার কি আমার নেই? আমি কি আমার স্বামীকে আটকের কারণ জানতে এবং আদালতের সামনে ন্যায়বিচার চাওয়ার আইনি অধিকারকে সমর্থন করতে সাহায্য করতে পারি না? আমার স্বামী কেমন অবস্থায় আছেন তা জানার অধিকার কি আমার নেই?”
তিনি আরও লেখেন, “২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আটক আছেন। আমার বা আমাদের নিকট আত্মীয়ের কারো সাথে কোনও যোগাযোগ নেই তাঁর। ভারতের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের কি শান্তিপূর্ণ মত প্রকাশ এবং চলাচলের স্বাধীনতার অধিকার নেই?”
ওয়াংচুকের নেতৃত্বে চলা সংগঠন স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ (সেকমল)-এর এফসিআরএ লাইসেন্স সম্প্রতি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অভিযোগ, বিদেশি অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে সংস্থাটি। সেকমল এবং তাঁর অপর সংগঠন হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ (এইচআইএএল)-এর আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
বলিউডের জনপ্রিয় ছবি থ্রি ইডিয়টস-এর আমির খানের চরিত্র ‘র্যাঞ্চো’-র অনুপ্রেরণা ছিলেন এই সোনম ওয়াংচুক। বাস্তব জীবনে তিনি বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা, টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং লাদাখের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের দিকে টেনে আনার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তবে বর্তমানে তাঁর পরিচয় ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক—‘শিক্ষক ও উদ্ভাবক’ থেকে সরে গিয়ে তিনি এখন সরকারের চোখে ‘অভিযুক্ত ও উস্কানিদাতা’।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন