লে-র অ্যাপেক্স বডি (LAB) আগামী ৬ অক্টোবর কেন্দ্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল। সংগঠনের বক্তব্য অনুসারে, লাদাখের দাবি আন্দোলনরতদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া তা প্রত্যাহার না করা হলে দিল্লিতে ৬ অক্টোবরের বৈঠকে তারা যোগ দেবেন না। সংগঠন আরও জানিয়েছে, সোনম ওয়াচুককে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর অধীনে গ্রেপ্তার এবং তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দেওয়ার বিরোধিতা করা হচ্ছে। কারণ সোনম ওয়াংচুক লাদাখের রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবিত আন্দোলন করছিলেন।
ল্যাব চেয়ারম্যান থুপস্তান ছেওয়াং সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন “যতক্ষণ না শান্তি ফিরে আসে, ততক্ষণ আমরা আলোচনা শুরু করব না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসনের উচিত পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য কিছু করা এবং এই স্থানটিকে আবার শান্তিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত করে তোলা”। প্রাক্তন সাংসদ আরও বলেন, এই অঞ্চলটি ৭০ বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছে এবং অবশেষে যখন ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়, তখনও এখানে কোনও আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়নি।
লেহ অ্যাপেক্স বডির সহ-সভাপতি এবং লাদাখ বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি চেরিং দর্জে বলেন, "এক সাংবাদিক সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমাদের দোষারোপ করেছেন। তারা বলেছেন যে নেপালি এবং ডোডার মানুষজন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। ডিজিপি প্রেসকে বলেছেন এই বিক্ষোভে পাকিস্তানের প্রভাব রয়েছে এবং সোনম ওয়াংচুক একজন দেশদ্রোহী। আমরা এটি সহ্য করব না এবং আমরা অপমানিত বধ করছি। সরকার যদি সময়মতো আলোচনা করত এবং দাবি পূরণ করত, তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না।"
লে-র এই শীর্ষ সংস্থাতে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠন আছে। এই অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বাস। তারা জানিয়েছেন, আন্দোলন করতে গিয়ে যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং সিআরপিএফ যে ৫০ জন আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। যতক্ষণ না কেন্দ্র এই পদক্ষেপ নেবে ততক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসা হবেনা।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আলোচনার রাস্তা খোলা আছে। যে কোনও সময় অ্যাপেক্স বডি লে এবং কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স লাদাখের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল লাদাখের লেহ শহরে গুলি চালনায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। আহত হন কমপক্ষে ৬০ জন। বুধবার আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠলে পুলিশ গুলি চালায়। উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায় বিজেপি অফিসে। এই ঘটনার পেছনে কংগ্রেসের উস্কানি আছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি নেতৃত্ব। এই হিংসার ঘটনার পর সোনম ওয়াংচুক সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং অনশন প্রত্যাহার করে নেন। যদিও এর দুদিন পরেই ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সোনম ওয়াংচুককে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেহ-তে কার্ফু জারি করা হয়েছে। লেহ-র জেলাশাসক চেরিং দোরজি ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) ২০২৩-এর ১৬৩ ধারা অনুসারে ওই অঞ্চলে কোনও ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন। এই নির্দেশের ফলে লেহ-তে কোনও জায়গায় একসঙ্গে ৪ জনের বেশি মানুষ জমায়েত করতে পারবেন না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন