Ladakh Unrest: পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি সহ চার দফা দাবিতে উত্তাল লাদাখ, গুলিতে হত ৪, আহত ৬০-এর বেশি

People's Reporter: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেহ-তে কার্ফু জারি করা হয়েছে। লেহ-র জেলাশাসক ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) ২০২৩-এর ১৬৩ ধারা অনুসারে ওই অঞ্চলে কোনও ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন।
লেহ তে বিজেপি অফিসে আগুন
লেহ তে বিজেপি অফিসে আগুন ছবি ওয়াসিম জাইদির এক্স হ্যান্ডেল ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট
Published on

পৃথক রাজ্যের দাবিতে উত্তাল লাদাখের লেহ শহরে গুলি চালনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আহত কমপক্ষে ৬০ জন। বুধবার আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠলে পুলিশ গুলি চালায়। উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করে বিজেপি অফিস। এই ঘটনার পেছনে কংগ্রেসের উস্কানি আছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। এই হিংসার ঘটনার পর সোনম ওয়াংচুক সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং অনশন প্রত্যাহার করে নেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেহ-তে কার্ফু জারি করা হয়েছে। লেহ-র জেলাশাসক চেরিং দোরজি ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) ২০২৩-এর ১৬৩ ধারা অনুসারে ওই অঞ্চলে কোনও ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন। এই নির্দেশের ফলে লেহ-তে কোনও জায়গায় একসঙ্গে ৪ জনের বেশি মানুষ জমায়েত করতে পারবেন না।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, লাদাখের মানুষের অধিকার অস্বীকার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা সোনম ওয়াংচুক গত ১৫ দিন ধরে অনশন চালাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে অনশনরত দু’জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এরপরেই জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং বুধবার বনধের ডাক দেয়। বুধবারের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় লেহ অ্যাপেক্স বডি (LAB)। এদিনের গুলিচালনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কারগিলে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

উত্তেজনা বাড়লে ক্ষিপ্ত জনতা লাদাখ অটোনমাস হিল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলের (LAHDC) অফিসের দিকে যাবার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের পথ আটকালে সাধারণ মানুষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা LAHDC-র অফিস লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এরপরেই পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। ক্ষিপ্ত জনতা এক সিআরপিএফ ভ্যান সহ বহু গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। অন্য একদল স্থানীয় বিজেপি অফিসে ভাঙচুর চালায়। অফিস থেকে বিজেপির পতাকা নামিয়ে দেয় এবং অফিসের কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে ও ভাঙচুর চালায়। তাঁদের অভিযোগ, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি বিজেপি।

কাশ্মীর টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, লেহ অ্যাপেক্স বডির চেয়ারম্যান চেরিং দোরজি জানিয়েছেন, চার আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে এবং গুলিচালনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এঁদের বেশ কয়েকজনকে আইসিইউ-তে রাখতে হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের চারটি দাবি কী কী?

আন্দোলনকারীদের প্রথম ও দ্বিতীয় দাবি, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে এবং লাদাখকে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার মত সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাতে এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem), জমি এবং কাজের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। তৃতীয় দাবি, এই অঞ্চলের বেকারদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, লাদাখে বেকারত্বের হার ২৬.৫ শতাংশ। যা জাতীয় গড় ১৩.৪ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। চতুর্থ দাবি, লাদাখ এবং কারগিলের জন্য দুটি লোকসভার আসন দিতে হবে।

এই চার দাবিতে লাদাখ বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (LAB) এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (KDA) দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলাচ্ছে। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয় আগামী ৬ অক্টোবর থেকে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। এর আগেও ২০২৩ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের পর এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছিল।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেবার পর থেকে এই আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে যেভাবে জম্মু ও কাশ্মীরকে দু’ভাগ করা হয়েছে এবং লাদাখকে সরাসরি কেন্দ্রের অধীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আইনসভা ছাড়া রেখে দেওয়া হয়েছে তার পরিবর্তন করতে হবে। লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। পাশাপাশি লেহ এবং কার্গিলের জন্য আলাদা লোকসভা আসনের দাবিও জানানো হয়েছে।

আন্দোলনের নেতা সোনম ওয়াংচুকের বক্তব্য

লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন খ্যাতনামা পরিবেশবিদ ওয়াংচুক। একসময় প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্তুতি গাইলেও বর্তমানে তিনি ঘোরতর মোদী বিরোধী। গত ৩৫ দিন ধরে নিজেদের দাবির সমর্থনে অনশন করছিলেন ওয়াংচুক। এতদিন পর্যন্ত অহিংস থাকা এই আন্দোলন বুধবার দুই অনশনকারী অসুস্থ হবার পরেই হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।

বুধবারের আন্দোলন প্রসঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় সোনম ওয়াংচুক জানিয়েছেন, যুবকদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বুধবার। যার ফলে তাঁরা রাস্তায় নেমে এসেছে। এটা জেন জি আন্দোলন। গত পাঁচ বছর ধরে লাদাখের যুবকদের হাতে কাজ নেই। লাদাখের সমস্যা কখনও মেটানো হয়নি। পুরো লাদাখের মানুষ আমাদের এই দাবির সঙ্গে আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি যুবকদের কাছে অনুরোধ করব, হিংসার পথে পা দেবেন না। এরকম হলে আমাদের পাঁচ বছরের প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যাবে। হিংসা আমাদের পথ নয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের কাছে আমাদের দাবি পেশ করতে চাই।

বিজেপির বক্তব্য

লেহ-র ঘটনায় বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছেন। বুধবার এক বিবৃতিতে দুবে জানান, লাদাখে বিজেপির অফিসে আগুন লাগানো হয়েছে। এঁদের নেতা রাহুল গান্ধী এবং তাঁর জেন জি নেতা ফুন্টসোগ স্ট্যাঞ্জিন শেপাগ এই আন্দোলনের মূল মাথা। যিনি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। আগুন নিয়ে খেলে লাভ কী হবে? বিজেপি কর্মীদের চ্যালেঞ্জ করা বন্ধ করা হোক।

যদিও বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন সোনম ওয়াংচুক। এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বুধবারের ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই কংগ্রেস জড়িত নয়। কারণ লাদাখে কংগ্রেসের সেই শক্তি নেই। এই ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেস জড়িত বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in