
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিল আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)। শনিবার দলটির রাজ্য সভাপতি আখতারুল ইমান জানান, এবার বিহারে তারা প্রায় ১০০টি আসনে প্রার্থী দেবে, যা ২০২০ সালের নির্বাচনে লড়া আসনের সংখ্যার পাঁচগুণ।
ইমানের দাবি, বিহারের রাজনীতিতে এতদিন ধরে দুটি শিবির—বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ও কংগ্রেস-আরজেডি-বাম জোট মহাগঠবন্ধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ লড়াই এবার ভাঙতে চলেছে। তিনি বলেন, “আমরা তৃতীয় বিকল্প তৈরি করতে চাই। এনডিএ হোক বা মহাগঠবন্ধন (বর্তমান INDIA ব্লক), দু’পক্ষকেই এবার আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করা হবে।"
তিনি আরও জানান, ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও তেজস্বী যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জোটের প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। ইমানের কথায়, “যেহেতু তারা কোনও আগ্রহ দেখায়নি, এবার আমরা নিজের মতো করে সংগঠন বিস্তারে জোর দেব। একই সঙ্গে কিছু মতাদর্শগতভাবে ঘনিষ্ঠ দলের সঙ্গে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, বিহারের ২৪৩ আসনে ভোট হবে দুটি দফায়— ৬ ও ১১ নভেম্বর। ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
২০২০ সালের নির্বাচনে এআইএমআইএম বিহারে প্রার্থী দেয় ২০টি আসনে, মায়াবতীর বিএসপি ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন (তৎকালীন) রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে। ওই নির্বাচনে এআইএমআইএম পাঁচটি আসন জেতে, বিশেষ করে সীমাঞ্চলগুলিতে ভালো ফল করে। তবে ২০২২ সালে দলের চার বিধায়ক আরজেডি-তে যোগ দেন। ফলে বর্তমানে আখতারুল ইমানই দলের একমাত্র বিধায়ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এআইএমআইএম বিহারে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে, বিশেষত সীমাঞ্চলে, নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ মুসলিম হলেও, তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বরাবরই তুলনামূলকভাবে কম। এই বাস্তবতা ওয়াইসির দলের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ওয়াইসি চার দিনের সফরে এসে সীমাঞ্চলের কিশনগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার ও পূর্ণিয়া ঘুরে দেখেন। সেখান থেকেই তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আরজেডি, জেডিইউ কিংবা কংগ্রেস - কেউই মুসলিমদের প্রকৃত স্বার্থরক্ষায় আন্তরিক নয়।”
তবে AIMIM-এর বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে, দলটি আসলে বিজেপির ‘বি টিম’ হিসেবে কাজ করে। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভোট বিভক্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত লাভ হয় গেরুয়া শিবিরের।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন