
আম আদমি পার্টি তখনই শেষ হয়ে গেছিল যখন তাদের নেতারা চার্টার্ড বিমানে চড়া, রাজকীয় স্যুটে থাকা এবং নিজেদের জন্য বিলাসবহুল ‘শীষ মহল’ বানানো অভ্যাস করেছিলেন। একসময়ের আপ নেতা এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘনিষ্ঠ আশুতোষ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির ভরাডুবির পর এভাবেই প্রাক্তন দলের সমালোচনা করলেন।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) প্রাক্তন আপ নেতা এবং সাংবাদিক লেখেন – আম আদমি পার্টি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি তাতে শিলমোহর পড়েছে। একইসঙ্গে তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে পাঞ্জাব নিয়েও সতর্ক করেছেন।
নিজের পোষ্টে আশুতোষ বলেন, আম আদমি পার্টি নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছিল। যারা নিজেদের শুধুমাত্র নির্বাচনে লড়াই করবার এক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছিল। যাদের নেতাদের মধ্যে চেয়ারের মোহ এসে গেছিল। আপের সম্পদ ছিল নৈতিকতা। সেই নৈতিকতাই যখন নষ্ট হয়ে গেল তখন আর কিছু অবশিষ্ট রইলো না। এখন আপের পক্ষে পাঞ্জাব রক্ষা করাও কঠিন কাজ।
এর আগে আপের বহিষ্কৃত সহ প্রতিষ্ঠাতা, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আপের পরাজয়ের জন্য সরাসরি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দায়ী করেন। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে প্রশান্ত ভূষণ লেখেন, বিকল্প রাজনীতির স্বচ্ছ মঞ্চ হিসেবে তৈরি করার পর অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছিলেন।
প্রশান্ত ভূষণ আরও বলেন, কেজরিওয়াল নিজের জন্য ৪৫ কোটি টাকার শীষ মহল তৈরি করেছিলেন এবং বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ঘোরা শুরু করেছিলেন। এছাড়াও আপ কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির ৩৩টি বিস্তারিত নীতিগত প্রতিবেদন তিনি বাতিল করে বলেছিলেন, সময় এলে দল সঠিক নীতি গ্রহণ করবে। আসলে তিনি (কেজরিওয়াল) মনে করেছিলেন যে শুধুমাত্র প্রচার এবং ধোঁকাবাজির মাধ্যমে রাজনীতি করা যাবে। এই ফলাফল আপের শেষের শুরু।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক আশুতোষ আম আদমি পার্টির শুরুর থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়া এগেন্সট করাপশান আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকে যুক্ত ছিলেন এবং শীর্ষ নেতৃত্ব ছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির চাঁদনীচক কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বিজেপির হর্ষবর্ধনের কাছে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩২০ ভোটে পরাজিত হন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালে তিনি আপের সঙ্গ ত্যাগ করেন।
দু’দফায় দিল্লিতে ক্ষমতাসীন থাকার পর সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে আপ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। দিল্লির ৭০ বিধানসভা আসনের মধ্যে এবার আপ জয়ী হয়েছে ২২ আসনে এবং বিজেপি জয়ী হয়েছে ৪৮ আসনে। উল্লেখযোগ্যভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাথে সাথেই এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সব শীর্ষ আপ নেতা পরাজিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে আপ জয়ী হয়েছিল ৬৭ আসনে এবং ২০২০তে আপ জয়ী হয় ৬২ আসনে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন