
মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশের নেতৃত্বে নতুন মহাযুতি সরকার শপথ নিয়ে নিলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থামছে না। সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বঞ্চিত বহুজন আঘাদি প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি প্রকাশ আম্বেদকর মহারাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। গত ২০ নভেম্বর ভোটগ্রহণের দিন সন্ধ্যা ৬টার পর যা ভোট পড়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন আম্বেদকর।
মূলত যে তিন প্রশ্ন আম্বেদকর তুলে এনেছেন তার মধ্যে আছে, বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত কত ভোট পড়েছে এবং ভোটাররা ক’টার সময় ভোট দিতে এসেছেন সেই সংক্রান্ত তথ্য জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অথবা রিটার্নিং অফিসারের কাছে আছে কি?
এছাড়াও আম্বেদকর জানতে চেয়েছেন, সন্ধ্যে ৬টার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের কোনও টোকেন দেওয়া হয়েছিল কি? যদি দেওয়া হয়ে থাকে তার সংখ্যা কত? তিনি বলেন, বিকেল ৫ টার পর থেকে রাজ্যে ভোট পড়েছে ৭৫ লক্ষ। সরকারিভাবে ৬টায় ভোট শেষ হবার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ম অনুযায়ী কোনও টোকেন দেওয়া হয়েছিল কি? যদি দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সেই বিলিকৃত টোকেনের সংখ্যা কত?
তাঁর তৃতীয় প্রশ্ন, এই সময় কোনও ভিডিওগ্রাফী করা হয়েছিল কি? যদি করা হয়ে থাকে তাহলে সেই ভিডিও কোথায়?
এর আগে গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে লেখা এক চিঠিতে একই প্রশ্ন করেছিলেন প্রকাশ আম্বেদকর। যদিও সেই চিঠির উত্তর এখনও তিনি পাননি। এর পরেই সোমবার ভিডিও বার্তায় নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি একই প্রশ্ন করেছেন।
এদিন আম্বেদকর বলেন, সদ্য সমাপ্ত মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে অস্থায়ী ভোটদানের হার এবং চূড়ান্ত ভোটদানের হার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলাম। যদিও আমার সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। তাই এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে পুরো বিষয়টা জানতে চাইছি।
প্রসঙ্গত, শুধু প্রকাশ আম্বেদকরই নন। এর আগে একই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী নেতারাও। এছাড়াও প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশীও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশী বলেন, নির্বাচনে ভোটদানের হার দ্রুত আপডেট করা হয়। কিন্তু ভোটদানের হারে এই পরিবর্তন দেখে আমি অবাক। গোটা দেশে যেভাবে এই ব্যবস্থার প্রতি সন্দেহ ছড়িয়ে পড়ছে তা সকলের মাথার মধ্যে ঢুকে গেলে বিপদ। পুরো ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস জন্মাবে। নির্বাচন কমিশনের উচিত এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, ফর্ম ১৭সি-তে প্রতি বুথে যা ভোটদান হয় তার হিসেব রাখা হয়। এটা ওইদিনের তৈরি করা রিয়েল টাইম ডাটা। এরপর কীভাবে পরের দিন সেই সংখ্যা এত বদলে যায় তা আমি বুঝতে ব্যর্থ।
তথ্য অনুসারে, মহারাষ্ট্রে ২০ নভেম্বর ভোটগ্রহণের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল ৫৫ শতাংশ। পরের দিন চূড়ান্ত ভোটদানের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬৭%। যে হারে মোট পার্থক্য ১২% ভোটের। উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের এবারের ভোটের হার বিগত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রকাশ আম্বেদকর বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমাদের উদ্বেগের নিরসন করা হলে সাধারণ মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণে অবমূল্যায়িত এবং হারিয়ে ফেলা বিশ্বাস ফিরে পাবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন