
১১৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বিশ্বের প্রবীনণতম ম্যারাথন দৌড়বিদ ফৌজা সিং (Fauja Singh)। সোমবার পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সকল দৌড়বিদের কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ম্যারাথন দৌড়বিদ ফৌজা সিং আর নেই। সোমবার বিকেলে পাঞ্জাবের জলন্ধর-পাঠানকোট মহাসড়কে এক পথ দুর্ঘটনায় তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। বিবিসি পাঞ্জাবির একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, সোমবার বিকেলে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আঘাত লাগে মাথায়। ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা সন্ধ্যা ৭.৩০ নাগাদ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল পাঞ্জাবের জলন্ধরের বেয়াস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফৌজা সিং। জীবনের শেষবয়সে এসেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত ফিট এবং সক্রিয়। তাঁর সন্তান বর্তমানে বিদেশে থাকেন। তাঁদের দেশে ফেরার পর ফৌজা সিং-এর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবার সূত্রে খবর।
পাঞ্জাবের গভর্নর গুলাব চাঁদ কাটারিয়া ফৌজা সিং-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বিদ এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক ফৌজা সিং জি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গত ডিসেম্বরে ‘Nasha Mukt – Rangla Punjab’ যাত্রায় তাঁর সঙ্গে হাঁটার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাঁর উপস্থিতি আমাদের আন্দোলনকে শক্তি ও চেতনায় ভরিয়ে দিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “তাঁর উত্তরাধিকার আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও মাদকমুক্ত পাঞ্জাবের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।”
বিশ্বজুড়ে তিনি ‘পাগড়িওয়ালা টর্নেডো’ নামেই পরিচিত ছিলেন। ১৯১১ সালের ১ এপ্রিল পাঞ্জাবের জলন্ধরের বেয়াস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের যুগে জন্ম নেওয়া ফৌজা সিং নিজের জীবদ্দশায় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের সময় তিনি তাঁর পরিবার হারান এবং জীবন এক কঠিন মোড় নেয়। নব্বইয়ের দশকে একমাত্র ছেলের সঙ্গে বসবাস করতে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান।
বয়স তখন ৮৯। ২০০০ সালে তিনি প্রথমবারের মতো অংশ নেন লন্ডন ম্যারাথনে। এখান থেকেই শুরু এক অনন্য পথচলা। এরপর তিনি টরন্টো, নিউ ইয়র্ক, হংকং-সহ বিশ্বজুড়ে বহু আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে নজর কাড়েন। ১০২ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক দৌড় থেকে অবসর নেন, তবে চ্যারিটি দৌড় এবং সুস্থতার বার্তা ছড়াতে সক্রিয় থাকেন আজীবন।
ফৌজা ছিলেন ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিক এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মশাল বাহক। ডেভিড বেকহ্যাম ও মহম্মদ আলীর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে একটি জনপ্রিয় স্পোর্টস ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে তাঁর উপস্থিতি তাঁকে ক্রীড়াজগতের আইকনে পরিণত করে।
২০১৩ সালের হংকং ম্যারাথনে ১ ঘন্টা ৩২ মিনিটে তাঁর দৌড় সম্পন্ন করার নজিরও ছিল দারুণ আলোচিত। তিনি শুধু একজন দৌড়বিদই ছিলেন না, বরং ছিলেন প্রেরণার উৎস-বিশ্বাস এবং সুস্থ জীবনের প্রতীক।
ফৌজা সিং-এর জীবন প্রমাণ করে, বয়স কেবল সংখ্যা মাত্র। তাঁর দৌড় থেমে গেলেও, অনুপ্রেরণার দৌড় চলতে থাকবে আরও বহু প্রজন্ম ধরে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন