যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন! মেসি সহ সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা মুখ্যমন্ত্রীর

People's Reporter: মমতা ব্যানার্জী এক্স মাধ্যমে সকল দর্শক এবং মেসির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি লেখেন, আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও হতবাক।
যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন! মেসি সহ সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা মুখ্যমন্ত্রীর
গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

যুবভারতীতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার ঘটনায় লিও মেসি সহ সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। পুরো ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার স্বপ্নের তারকা মেসিকে ভালো করে দেখতে না পেয়ে যুবভারতীতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। মেসি যুবভারতীতে পৌঁছোতেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। মূলত মন্ত্রী, কর্তারাই ঘিরে ধরেন তাঁকে। জানা গেছে, তাঁকে ভাল করে হাঁটার জায়গাটুকুও দিচ্ছিলেন না কেউ কেউ! ক্যামেরা এবং মোবাইল হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গ্যালারি থেকে তাঁকে একদমই দেখা যাচ্ছিল না। ক্ষুব্ধ হতে থাকেন সমর্থকরা।

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যুবভারতী ছেড়ে বেরিয়ে যান মেসি। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ব্যাপক চেয়ার ভাঙচুরের পাশাপাশি মাঠে জলের বোতল ছোঁড়া হয়। ভিআইপি সোফা এবং মাঠের ধারে রাখা তাঁবুতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়। উন্মত্ত দর্শকদের আটকাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আহত হয় প্রচুর সমর্থক। রাজ্যের নেতা মন্ত্রীদের উপর ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন দর্শকরা। তাঁদের অভিযোগ, হাজার হাজার টাকা দিয়ে মেসিকে দেখতে এসে, অরূপ বিশ্বাসকে দেখে ফিরে যাচ্ছে তাঁরা। ক্রীড়া উদ্যোগপতি শতদ্রু দত্তের বিরুদ্ধে এফআইআর চেয়েছেন তাঁরা। সরকারের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন সমর্থকদের একাংশ। টাকা ফেরত ছেয়েছেন তাঁরা।

সমস্ত ঘটনায় মমতা ব্যানার্জী এক্স মাধ্যমে সকল দর্শক এবং মেসির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি লেখেন, "আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও হতবাক। আমি হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী ও ভক্তদের সাথে অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলাম, যাঁরা তাঁদের প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসিকে এক ঝলক দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি লিওনেল মেসি, সেইসাথে সকল ক্রীড়াপ্রেমী ও তাঁর ভক্তদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি"।

তিনি আরও লেখেন, "আমি বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম কুমার রায়ের সভাপতিত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি, যার সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব। এই কমিটি ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত করবে, দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করবে। আরও একবার, আমি সকল ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে আমার আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি"।

সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন ক্ষুব্ধ দর্শকরা। এক দর্শক বলেন, আমরা মেসিকে দেখতে আসিনি। অরূপ বিশ্বাসকে দেখতে এসেছিলাম। প্রথম থেকেই তিনি মেসির সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। আরেক জন বলেন, মমতা ব্যানার্জির যদি ভোটের জন্য টাকা দরকার ছিল আমাদের বলতে পারতেন। আমরা ক্রাউড ফান্ডিং করে তাঁকে টাকা দিতাম। এইভাবে আমাদের ঠকানো হল কেন।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। তিনি লেখেন, 'কেন মেসিকে ঘিরে থাকল হ্যাংলামির ভিড়? কেন স্টেডিয়াম পরিক্রমার সময় মেসিকে একা এগিয়ে রাখা হল না? কেন গ্যালারির দর্শকদের বঞ্চিত করা হল? এতে কলকাতার সুনাম বাড়ল? অপদার্থ আয়োজক কেন ন্যূনতম পরিকল্পনার ছাপ রাখল না? শুধু টাকা? শুধু ব্যবসা? এই আয়োজক আর কিছু হ্যাংলার জন্য সবাই বঞ্চিত হল। কলকাতা লজ্জিত হল। দর্শকদের ক্ষোভ ন্যায্য'।

সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, সিপিআইএম-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তিনি বলেন, "তৃণমূলের আমলে কোনও কাজ ঠিক ভাবে হয়? খেলা, মেলা সব জায়গায় অশান্তি হচ্ছে এদের আমলে, আজ তো যুবভারতীও ভাঙচুর হল। নবান্ন ভাঙচুর হয়নি।" সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করে জানান, "তৃণমূল থাকবে আর দুর্নীতি হবে না? লোকের হাজার হাজার টাকা লুঠ হয়েছে।"

যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন! মেসি সহ সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা মুখ্যমন্ত্রীর
'২০২৫-র সবথেকে বড় দুর্নীতি' - মেসিকে দেখতে না পেয়ে চরম বিশৃঙ্খলা যুবভারতীতে, উঠলো 'চোর চোর' স্লোগান
যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন! মেসি সহ সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা মুখ্যমন্ত্রীর
Messi: আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসির সাথে ফ্রেমবন্দী করতে পারেন নিজেকে! কত খরচ হবে জানেন?

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in