
এভারেস্ট জয় করে নেমে আসার সময় মৃত্যু হল এক ভারতীয় পর্যটক সুব্রত ঘোষের। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা, ৪৫ বছর বয়সী সুব্রত ঘোষ এভারেস্ট জয় করার পর নেমে আসছিলেন। অন্যদিকে ১৪ মে মৃত্যু হয়েছে ফিলিপাইন্সের এক পর্যটকেরও। ৪৫ বছর বয়সী ফিলিপ স্যান্টিয়াগোর এভারেস্ট আরোহণের সময় মৃত্যু হয়। সুব্রত ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর-স্নোয়ি এভারেস্ট এক্সপিডিশন ২০২৫-এর দলের সদস্য ছিলেন।
নেপালের স্নোয়ি হরাইজন ট্রেকস অ্যান্ড এক্সপিডিশন অর্গানাইজেশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বোধরাজ ভান্ডারি জানিয়েছেন, বাঙালি পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষ এভারেস্ট জয়ের পর নেমে আসার সময় হিলারি স্টেপ-এ এসে অবসন্ন হয়ে পড়েন এবং ইশারায় উচ্চতাজনিত অসুস্থতার কথা জানান এবং নিচে নামতে অস্বীকার করেন। দ্য হিমালয়ানের তথ্য অনুসারে তাঁর গাইডের নাম ছিল পালচেন তামাং। যাকে উদ্ধৃত করে বোধরাজ একথা জানিয়েছেন। এই বিষয়ে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
আপাতত দুই পর্বতারোহীর দেহ নিচে বেস ক্যাম্পে আনার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন বোধরাজ ভান্ডারি। এই দুই পর্বতারোহীই বোধরাজ ভান্ডারির সংস্থার সদস্য হিসেবে এভারেস্ট অভিযানে শামিল হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এভারেস্টের প্রায় ৮ হাজার মিটার বা ২৬,২৫০ ফুট উচ্চতায় সাউথ কল এবং চূড়ার মাঝামাঝি অংশে হিলারি স্টেপ অবস্থিত। যাকে ‘ডেথ জোন’ বলা হয়। এই অঞ্চলে তীব্রভাবে অক্সিজেনের অভাব অনুভূত হয়।
সুব্রত ঘোষের সঙ্গেই বৃহস্পতিবারই মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন রুম্পা দাস। সুব্রত ঘোষ এবং রুম্পা দাস দু'জনেই রানাঘাট কুপার্স ক্যাম্পের বাসিন্দা। রানাঘাট ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ বাগদার কাপাসটি মিলনবীথি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ৷ ৪৪ বছরের রুম্পা দাস কুপার্স ক্যাম্পেরই একটি স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা ৷ বাঙালি অভিযাত্রী হিসেবে দু'জনেই এভারেস্ট জয়ের নজির গড়লেও ফিরে আসতে পারলেন না সুব্রত ঘোষ। যদিও শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও শৃঙ্গ জয়ের পর ফোর্থ ক্যাম্পে নেমে আসতে সক্ষম হন রূম্পা দাস।
এই সাউথ কল অঞ্চলেই বুধবার মৃত্যু হয়েছে ফিলিপাইন্সের পর্বতারোহী ফিলিপ স্যান্টিয়াগোর। তাঁর মৃত্যু প্রসঙ্গে নেপাল ট্যুরিজম-এর আধিকারিক হিমাল গৌতম জানিয়েছেন, চূড়ায় আরোহণ করার পথে ফোর্থ ক্যাম্পে পৌঁছে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এরপর তাঁবুতে বিশ্রাম নেবার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।
নেপালের পক্ষ থেকে চলতি মরশুমে এভারেস্ট অভিযানের জন্য মোট ৪৫৯টি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহেই কমপক্ষে ১০০ জন পর্বতারোহী এবং তাঁদের গাইডরা অভিযান সেরে ফিরে এসেছেন। মে মাসেই শেষ হয়ে যাবে এবারের মরশুম।
তথ্য অনুসারে, বিগত ১০০ বছরে এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৪৫ জন অভিযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ২০০ মরদেহ এখনও পর্যন্ত এভারেস্টেই শায়িত আছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে প্রথমবার সফলভাবে এভারেস্ট জয়ের পর থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০০ পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, এভারেস্ট আরোহণ করতে গিয়ে মৃত্যুর গড় সংখ্যা ছিল প্রতি বছর প্রায় ৩.২ জন। যদিও, ২০২৩ সাল ছিল এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক বছর। যে বছর এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে ১৭ জন পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন