
* কর্নেল সোফিয়া কুরেশী প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী বিজয় শাহ।
* মন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস।
* এর আগে ২০১৩ সালেও তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন বিজয় শাহ।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিশ্চই মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহকে ইস্তফা দিতে বলবেন। বৃহস্পতিবার একথা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রেদেশের কংগ্রেস প্রধান জিতু পাটোয়ারি। এদিনই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ইন্দোরে বিজেপি নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সম্পর্কে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার বিজয় শাহ শীর্ষ আদালতে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে জরুরি শুনানির আবেদন জানালে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, আদালত বলেছিল চার ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে হবে। যা করা হয়েছে আট ঘণ্টা পর। এখন ওই মন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে বিচার চাইবে। যার অর্থ, এই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার বদলে বিজেপি তাঁকে রক্ষা করতে চাইছে।
পাটোয়ারীর মতে, বিজয় শাহকে রক্ষা করার পরিবর্তে তাঁকে মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করে দেশের কাছে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির বার্তা দেওয়া উচিত। যা দেশের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যে অবমাননাকর মন্তব্য করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
বিজয় শাহের মন্তব্য প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভয় তিওয়ারী বলেন, এর আগে ২০১৩ সালে বিজয় শাহ যখন রাজ্যের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন তখন তাঁকে মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর এখন যখন তিনি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন তখন বিজেপি চুপ। এটাই কি বিজেপির দেশপ্রেম?
বিজয় শাহের মন্তব্য প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং জানিয়েছেন, শাহের মানসিকতা বিজেপির ট্রোল বাহিনীর মত। যার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পরেও শাসক দল তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার এই বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, এখন বিজেপি নেতাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে যে কে আগে কোনও ইস্যুকে হিন্দু মুসলিম ইস্যুতে নিয়ে যেতে পারবে। এটা শুধু বিজয় শাহের মানসিকতা নয়। এটা বিজেপির ট্রোল বাহিনীরও মানসিকতা। বিজয় শাহ যা বলেছেন তা আসলে বিজেপি নেতাদের আরএসএস মানসিকতার প্রকাশ।
সোমবার ইন্দোরের কাছে মোহাউতে তহসিলের মানপুরে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বিজয় শাহ বলেন, “ওরা আমাদের হিন্দু ভাইদের পোশাক খুলে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিজি ওদের (জঙ্গিদের) বোনকেই পাঠিয়েছেন ওদের বাড়িতে হামলার জন্য। ওরা (জঙ্গিরা) আমাদের বোনকে বিধবা করেছে, তাই মোদিজি ওদের সম্প্রদায়ের বোনকেই ওদের পোশাক খুলে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন”।
অবশ্য বিতর্কের জেরে বুধবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন মন্ত্রী বিজয় শাহ। গতকাল তিনি লেখেন, "আমি, বিজয় শাহ, আমার সাম্প্রতিক বক্তব্য, যা প্রতিটি সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করেছে তার জন্য কেবল লজ্জিত এবং দুঃখিতই নই, বরং আমি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমাও চাইছি। আমাদের দেশের বোন সোফিয়া কুরেশীজী জাতি ও সমাজের ঊর্ধ্বে উঠে তার জাতীয় কর্তব্য পালনের সময় কাজ করেছেন।"
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে "অশ্লীল" মন্তব্য এবং "নোংরা ভাষা" ব্যবহারের কারণে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের জন্য ১৪ মে, ২০২৫ তারিখে যে আদেশ দিয়েছে তাকে চ্যালেঞ্জ করে করা বিজয় শাহের আবেদনের জরুরি শুনানি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন