
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্য নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। কংগ্রেস শিবিরের দাবি, পহেলগাঁওতে যে জঙ্গীরা হামলা চালিয়েছিল, তারা কোথায়? তাদের যখন ধরাই যায়নি, তাহলে কীভাবে এই অভিযানকে সফল বলা হচ্ছে? ন্যায় বিচারই বা সকলকে দেওয়া হল কীভাবে? এছাড়া কংগ্রেসের অভিযোগ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার ফলে অপমানিত বোধ করেছে দেশের মানুষ।
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমরা জানতে চাই, যে জঙ্গীরা পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করল, তাদের কী হল? তারা কি ধরা পড়েছে? তাদের কি মেরে ফেলা হয়েছে? কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিয়েছে, পহেলগাঁওয়ের হামলায় নিরাপত্তার ব্যর্থতা ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করেছে? সরকার কি তার দায় নির্দিষ্ট করেছিলো? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি ইস্তফা দেবেন?”
সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে পহেলগাঁও-এ জঙ্গীর হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমাদের নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। সরকার সেনাবাহিনীকে সমস্তরকম পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে। কংগ্রেসও প্রতিটি পদক্ষেপে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী জঙ্গীদের আস্তানা ধ্বংস করেছে। কিন্তু তারপর ট্রাম্পের টুইট যেভাবে এসেছে, তাতে আমরা সবাই হতবাক। যা আমাদের সকলের মনে অনেক প্রশ্ন জাগিয়েছে।
ভূপেশ বাঘেল বলেন, আমরা জানতে চাই, ট্রাম্পের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা কি মধ্যস্থতা গ্রহণ করেছি? শিমলা চুক্তি কি এখন বাতিল? এরকম অনেক প্রশ্ন আছে। অতএব, কংগ্রেস দাবি করছে যে সরকার সর্বদলীয় সভা এবং সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকুক যাতে পুরো পরিস্থিতি স্পষ্ট করা যায়।
উল্লেখ্য, ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে শনিবার আচমকাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করেন। যার ফলে দেশবাসীর একাংশ হতাশ হয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। এরপরেই কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, কীভাবে আমেরিকার মধ্যস্থতা মেনে নিয়েছে মোদী সরকার? বিশেষ করে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব কি মেনে নিয়েছে ভারত?
অন্যদিকে, কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান পবন খেরা এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মোদী সরকারেরই প্রথম বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘শিমলা চুক্তি মেনে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কথা হলে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানা হবে না’। নরেন্দ্র মোদী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুসরণ না করতে পারলে অন্তত সুষমা স্বরাজকে অনুসরণ করুন”।
এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি নিয়ে সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুলে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী সাংসদ রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়্গে। এবার একই দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি।
যদিও বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে, সেনাবাহিনীকে খোঁচা দিয়ে আদতে পাকিস্তানের সুবিধা করে দিতে চায় বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। যার পাল্টা পবন খেরা জানান, ‘‘১৯৬২ সালে যুদ্ধের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন নেহরু সরকারের কাছে বিশেষ অধিবেশনের দাবি তুলেছিলেন, তখন কি তিনি সেনাবাহিনীকে খোঁচা দেওয়ার জন্য এই দাবি তুলেছিলেন?”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন