৬ লক্ষের কেপ ভার্দে ফুটবল বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করলে ১৪০ কোটির ভারত নয় কেন? প্রশ্ন থেকেই যাবে

People's Reporter: ভারত কবে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলবে? এই প্রশ্ন সকল ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীর মধ্যেই রয়েছে। ক্রিকেটে ভারত আধিপত্য বজায় রাখলেও ফুটবলে তার ছিটেফোঁটাও নেই।
ভারতীয় ফুটবল দল
ভারতীয় ফুটবল দলছবি - ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের ফেসবুক পেজ
Published on

মাত্র ৬ লক্ষ জনসংখ্যার একটি দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্দে। এসোয়াটিনিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এই প্রথম ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে এই দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্ত ভারত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ হয়েও এখনও সেই ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেনি। এমনকি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে উঠতেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন সুনীল ছেত্রীরা। সমাজমাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন, কেপ ভার্দেকে দেখে ভারতের শেখা উচিত।

ভারত কবে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলবে? এই প্রশ্ন সকল ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীর মধ্যেই রয়েছে। ক্রিকেটে ভারত আধিপত্য বজায় রাখলেও ফুটবলে তার ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু ফিফা র‍্যাঙ্কিং-এ একসময়ে ১৮২ নম্বরে থাকা কেপ ভার্দে লাগাতার উন্নতি করে চলেছে ফুটবলে। তাদের বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিং ৭০। ২০০২ সালে বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যায় দেশটি। তারপরই নিজেদের গড়ে তুলতে বিদেশে খেলা বংশোদ্ভূত দেশীয় ফুটবলারদের দেশের হয়ে খেলার প্রস্তাব দিতে শুরু করে কেপ ভার্দে। অনেকেই রাজি হন দেশের হয়ে খেলার জন্য।

পর্তুগিজদের অধীনে ছিল বলে প্রচুর ফুটবলার পর্তুগাল থেকে কেপ ভার্দের জাতীয় দলে যোগ দিতে আসেন। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকেও কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা আসেন। বর্তমানে মূল স্কোয়াডের ১৪ জন অন্য দেশে থাকেন।

কেপ ভার্দে ফুটবল সংস্থার সহ-সভাপতি জানান, “আমরা কোচ লিতাওকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে পর্তুগালে থাকা কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের এই দেশের হয়ে খেলার জন্য রাজি করাতে পারেন।”

নেদারল্যান্ডসের রটারডামে কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ বসবাস করেন। সংখ্যাটা প্রায় ২৩ হাজার। সেখান থেকেই ৬ জনকে কেপ ভার্দের জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় দলে যাঁরা খেলছেন তাঁরা অনেকেই স্থানীয় লিগে ফুটবল খেলেন। মাসিক আয় ভারতীয় মুদ্রায় বড়জোর ৩১ হাজার টাকা। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে তাঁদের দায়বদ্ধতা চোখে পড়ার মতো।

কেপ ভার্দে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থান। ইতিহাস অনুযায়ী পঞ্চদশ শতকে এই দ্বীপের আবিষ্কার করেন পর্তুগিজরা। ১৪৬০-র পর থেকে সেখানে বসবাস করতে শুরু করে পর্তুগিজরা। ১৯৭৫ সালে পর্তুগিজদের থেকে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে দ্বীপরাষ্ট্রটি। স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে শুধু সিনিয়র জাতীয় দলই নয়, কেপ ভার্দের অনূর্ধ্ব-১৭ দল এবং মহিলা ফুটবল দলও অনেক উন্নতি করছে। দেশটির মধ্যে ফুটবল নিয়ে একটি রোড ম্যাপও তৈরি হয়েছে। ভারতেও এমন অনেক রোড ম্যাপ তৈরি করার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।

ভারতের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লিগ আইএসএল শুরু করার উদ্দেশ্যই ছিল সুনীলদের উন্নতির জন্য। ভালো মানের বিদেশি ফুটবলারদের বিভিন্ন দলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি তা ফলাফল দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। সুনীল ছেত্রীকে একাধিকবার আক্ষেপ করতে শোনা গেছে, পরিকাঠামো উন্নত না হলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি অসম্ভব। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থার পদগুলি হয়তো শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। ফুটবলের বিশেষ উন্নতি হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

তবে আরও একটি কারণে কেপ ভার্দের বিশ্বকাপ খেলা সহজ হয়েছে। আফ্রিকার ক্ষেত্রে ৫টি স্থান থেকে ৯টি স্থান করা হয়েছে। সেখানে এশিয়ার ক্ষেত্রে ৮টি স্থান নির্দিষ্ট রয়েছে। সেখানে জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দেশও রয়েছে।

এছাড়া ভারতে ক্রিকেটের প্রভাব বেশি থাকার কারণে ফুটবল জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। কেপ ভার্দের ক্রীড়া আবেগ ফুটবলকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু ভারতে ক্রীড়ার অধিকাংশ ভক্ত ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছেন। যার কারণে কর্পোরেট স্পনসরশিপ এবং মিডিয়া কভারেজের সিংহভাগ ক্রিকেটেই থাকে। ফুটবলে স্পনসরশিপ পাওয়াই বর্তমানে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ক্রিকেটে যেভাবে অর্থ খরচ করা হয়, ফুটবলের জন্য তার সিকিভাগও খরচ হয় না।

তবে কেপ ভার্দের মতো ক্ষুদ্র দেশ যদি ফুটবল বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তাহলে ভারত কেন পারবে না? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাবে যতদিন না ভারত বিশ্বকাপে সুযোগ পাচ্ছে।

ভারতীয় ফুটবল দল
FIFA World Cup Qualifier: ইতিহাস কেপ ভার্দের, প্রথমবার ফিফা বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন আফ্রিকান দেশটির
ভারতীয় ফুটবল দল
Messi & Ronaldo: একজনের জোড়া অ্যাসিস্ট, অন্যজনের জোড়া গোল! বিশ্বরেকর্ড মেসি-রোনাল্ডোর

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in