FIFA World Cup 26: টেলস্টার থেকে ট্রাইওন্ডা, একনজরে ফিফা বিশ্বকাপের ফুটবল বিবর্তনের ইতিহাস

People's Reporter: প্রথম বিশ্বকাপে কোনো অফিশিয়াল ম্যাচ বল ছিল না। ফলে আয়োজক উরুগুয়ে এবং অর্জেন্টিনা ফাইনালে ভিন্ন ভিন্ন বলে খেলার দাবি জানায়।
বিভিন্ন বিশ্বকাপের ফুটবল
বিভিন্ন বিশ্বকাপের ফুটবলছবি - ফিফা বিশ্বকাপের ফেসবুক পেজ
Published on

আগামী বছর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। কানাডা, মেক্সিকো এবং আমেরিকা এই ৩ দেশে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬-র বিশ্বকাপ। এবার বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ম্যাচ বলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রাইওন্ডা’ (Trionda)। যার অর্থ তিন ঢেউ বা তিনটি ঢেউ। ১৯৩০ সালের টি-মডেল (T-Model) থেকে শুরু করে ২০২২ সালের আল রিহলা (Al Rihla) একনজরে দেখা যাক ফুটবল বিশ্বকাপের বল বিবর্তনের ইতিহাস।

১৯৩০ ফুটবল বিশ্বকাপ (উরুগুয়ে) –

প্রথম বিশ্বকাপে কোনো অফিশিয়াল ম্যাচ বল ছিল না। ফলে আয়োজক উরুগুয়ে এবং অর্জেন্টিনা ফাইনালে ভিন্ন ভিন্ন বলে খেলার দাবি জানায়। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই দাবি মানতে নারাজ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে নিজেদের পছন্দের টিয়েন্টো বলে খেলে ২-১ ব্যবধানে লিড নেয়। দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ে নিজেদের টি-মডেলের বলে খেলে ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে নেয়।

১৯৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ (ইতালি) -

হাতে-সেলাই করা ১৩টি প্যানেল নিয়ে গঠিত এই বলটি ইতালিয়ান কোম্পানির তৈরি। তবে প্রতিটি ম্যাচে খেলার আগে দলগুলোর ক্যাপ্টেনই বল নির্বাচন করতেন।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৩৮ (ফ্রান্স) –

এই বিশ্বকাপের ম্যাচগুলিতে 'অ্যালেন' বলে ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে যেমন বলের উপর ব্র্যান্ডিং থাকে তেমন কোনও ব্র্যান্ডিং ছিল না।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫০ (ব্রাজিল) –

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ সালে ফের শুরু হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে আয়োজকরা সুপারবল ডুপলো টি বল ব্যবহার করেন। অতীতের বিশ্বকাপগুলিতে বলে জুতোর ফিতের মতো দড়ি ব্যবহার করা হত। এই সংস্করণ থেকে ফিতে ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে, বলের মধ্যে ভালভ ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে বলটি পাম্প দেওয়া যেত।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫৪ (সুইজারল্যান্ড) -

এই বিশ্বকাপে প্রথম হলুদ রঙের স্যুইস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন’ বল ব্যবহার করতে দেখা যায়। যাতে দর্শক স্টেডিয়ামের উঁচু জায়গার সিট থেকেও দেখতে পান। ১৮টি লম্বা চামড়ার টুকরো নাইলনের সুতো দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে এই বল জল শোষণ করায় ভারী হয়ে যেত। ফলে ফুটবলারদের খেলতে সমস্যা হত।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৫৮ (সুইডেন) -

এই বিশ্বকাপে বল নির্বাচন হয়েছিল একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষ ১০২টি ব্র্যান্ডহীন বলের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। নির্বাচকদের কাছে কোনও বলের নাম প্রকাশ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ‘টপ স্টার’ জয়ী হয়। এই বলগুলি হলুদ, হালকা বাদামী এবং সাদা রঙে পাওয়া যেত।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৬২ (চিলি) -

১৯৬২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ফুটবলের নাম ছিল ‘মিস্টার ক্র্যাক’। আগের বিশ্বকাপে খেলা বলগুলির তুলনায় এই বলটি বেশি গোলাকার। তবে জল শোষণ করার জন্য অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৬৬ (ইংল্যান্ড) -

১৯৬৬ সালেও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বল বাছাই করা হয়েছিল। ১০০-র বেশি ব্র্যান্ডহীন ফুটবল পরীক্ষা করে বিশ্বকাপের জন্য বল নির্বাচিত করা হয়। বলের ওজন, আকৃতি সবকিছুর পরীক্ষা করা হয়। সেই বলের নাম ছিল চ্যালেঞ্জ ফোর-স্টার।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৭০ (মেক্সিকো) -

১৯৭০ সাল থেকে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ম্যাচ বল তৈরি করছে অ্যাডিডাস। তাদের অফিশিয়াল ম্যাচ বলের নাম ছিল টেলস্টার। ৩২ প্যানেল (১২টি কালো, ২০টি সাদা) নিয়ে তৈরি এবং স্যাটেলাইটের নামে নামকরণ হয়।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৭৪ (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) -

পূর্ববর্তী বিশ্বকাপের তুলনায়, ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলিতে ব্র্যান্ডেড বল দেখা যায় যার উপর বলের নাম, প্রস্তুতকারক এবং 'অফিশিয়াল বিশ্বকাপ ১৯৭৪' লেখা থাকে। বলটি জল এবং কাদা প্রতিরোধী ছিল।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৭৮ ( আর্জেন্টিনা) –

এই বিশ্বকাপে যে বলটি ব্যবহার করা হয়েছিল তার নাম ছিল ‘ট্যাঙ্গো ডারলাস্ট’।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৮২ (স্পেন) -

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপেও অ্যাডিডাস ট্যাঙ্গো বল ব্যবহার করেছিল। নাম দিয়েছিল ট্যাঙ্গো এস্পানা। এই বলের নকশায় ২০টি কালো রঙের ত্রিভূজ ছিল। যে ত্রিভূজগুলি একত্রিত হয়ে ১২টি বৃত্ত তৈরি করেছিল।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৮৬ (মেক্সিকো) –

৮৬-র বিশ্বকাপে অফিশিয়াল ম্যাচ বলের নাম ছিল 'অ্যাজটেকা'। মূলত মেক্সিকো অঞ্চলে ১৪০০-১৬০০ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের মানুষদের সম্মান জানাতে এই নাম ব্যবহার করা হয়। বলটি সিন্থেটিক ছিল। ফলে জল শোষণ ক্ষমতা কম।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯০ (ইতালি) -

এত্রুসকো সভ্যতার সম্মানে বলটির নাম দেওয়া হয় এত্রুসকো ইউনিকো। বলের ডিজাইনে তিনটি সিংহের মাথা আঁকা হয়েছিল। এই সভ্যতার মানুষরা মধ্য এবং উত্তর ইতালিতে বসবাস করতেন।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৪ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) -

মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞানকে বলের ডিজাইনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়েছিল। যেখানে স্পেস এক্সপ্লোরেশন থিমের সঙ্গে গ্রহ, রকেট ও তারা দেওয়া হয়েছিল। বলটির নাম রাখা হয়েছিল ‘কোয়েস্ট্রা’।

ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ (ফ্রান্স) -

১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে অ্যাডিডাস প্রথম মাল্টি-কালার ফুটবল ব্যবহার করে। যার নাম রাখা হয়েছিল ‘ট্রাইকালার’।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০০২ (কোরিয়া/জাপান) –

এই সংস্করণে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ফুটবলের নাম দেওয়া হয়েছিল ফিভারনোভা (Fevernova)। বলগুলিতে চারটি ত্রিকোণ নকশা ছিল, যা বিকল্প শক্তির উৎস উদযাপনে টারবাইনের প্রতীকী হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০০৬ (জার্মানি) –

১৪টি প্রোপেলার শেপের প্যানেল ছিল বলে। নাম দেওয়া হয়েছিল টিমগেইস্ট (Teamgeist)। যার অর্থ দলগত মনোভাব।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১০ (দক্ষিণ আফ্রিকা) -

১১টি রঙ দিয়ে বলটির নকশা তৈরি করা হয়েছিল। যা প্রতিটি খেলোয়াড় ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষার প্রতীক। বলের নাম দেওয়া হয় জাবুলানি (Jabulani)। জুলু ভাষায় এর অর্থ উদযাপন করা।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ (ব্রাজিল) -

৬টি প্রোপেলার শেপের প্যানেল দিয়ে তৈরি হয় ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ম্যাচ বল ‘ব্রাজুকা’ (Brazuca)। জনমতের মাধ্যমে বলের নামকরণ হয়। ১০ লক্ষের বেশি মানুষ এই ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে ব্রাজুকা শীর্ষ পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছিল। ব্রাজিলিয়ানরা তাঁদের জীবনযাত্রার প্রতি সম্মান জানাতে এই শব্দটি ব্যবহার করে।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮ (রাশিয়া) –

এই বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ম্যাচ বলের নাম ‘টেলস্টার ১৮’ (Telstar 18)। ৫০ বছর আগের টেলস্টারের সম্মানের জন্য এই নাম ব্যবহার করা হয়। NFC চিপও যুক্ত ছিল।

ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ (কাতার) –

কাতার বিশ্বকাপের বলটির নাম ছিল ‘আল রিহলা’ (Al Rihla) । যার অর্থ হলো ভ্রমণ। ফিফার তরফ থেকে জানানো হয় 'আল রিহলা' ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগামী বল। অ্যাডিডাস জানায়, ‘আল রিহলা’ নামের এই বলটি কাতারের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ঐতিহ্যবাহী নৌকা এবং পতাকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো।

বিশ্বকাপের প্রতিটি বল কেবল খেলার মাধ্যম নয়, সেই সময়ের প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও খেলোয়াড়দের চাহিদারও প্রতিফলন। ফুটবলের এই ইতিহাস দেখায়, কিভাবে খেলা এবং প্রযুক্তি একসাথে এগিয়ে চলেছে।

বিভিন্ন বিশ্বকাপের ফুটবল
Cristiano Ronaldo: বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে 'বিলিওনেয়ার' হলেন রোনাল্ডো! সম্পত্তির পরিমাণ জানেন?
বিভিন্ন বিশ্বকাপের ফুটবল
FIFA World Cup Qualifier: জোড়া গোল সালাহর, ৮ বছর পর ফুটবল বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন মিশরের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in