উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ঘৃণ্য আক্রমণের মুখে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। যিনি পাক ভারত সংঘর্ষের আবহে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে দেশ এবং বিদেশে নজর কেড়েছেন। তাঁর পরিমিত বিবৃতি নজর কেড়েছে গোটা দুনিয়ার। যদিও তিনি রেহাই পাননি নিজের দেশের কিছু মানুষের কাছ থেকেই। উগ্র দেশপ্রেমীদের ঘৃণ্য আক্রমণের সামনে রবিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেল বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত ১০ মে বিকেল থেকে। যখন ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন। যে ঘোষণা বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রির ব্যক্তিগত কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না। ছিল ভারত রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত এবং তিনি বিদেশ সচিব হিসেবে দেশের পক্ষে সেই ঘোষণা করেছিলেন।
যদিও এরপর থেকেই তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে উগ্র দেশপ্রেমী এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের ঝড় চলে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুরোনো ছবি সহ সেই ঘৃণ্য আক্রমণ লাগাতার চলতেই থাকে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে, ট্রোলররা মিসরির পরিবারের ছবির নিচে মন্তব্য করতে শুরু করে। তাঁর মেয়ে ডিডন মিসরিকে লক্ষ্য করে একাধিক আপত্তিকর মন্তব্য করে। কারণ তিনি মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আইনি সহায়তা প্রদানে কাজ করেছেন।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ মিসরির প্রতি তাদের সমর্থন জানান এবং অনলাইন এই হয়রানির জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
সাংবাদিক মায়া মিরচন্দানি এই ট্রোলিংকে "ভয়াবহ" এবং "অগ্রহণযোগ্য" বলে অভিহিত করে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, মিস্রি কেবল রাজনৈতিক নেতৃত্বের গৃহীত সিদ্ধান্তের বার্তাবাহক ছিলেন। তিনি আরও বলেন, এই ধরণের অভ্যাস বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক তৈরি করা এক অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন হয়রানির সংস্কৃতির লক্ষণ।
প্রবীণ সাংবাদিক বীর সাংভি বিক্রম মিস্রির ওপর অপভাষা প্রয়োগকারীদের "হিউম্যান গারবেজ" বলে অভিহিত করে বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় দেশের জন্য প্রশংসনীয়ভাবে অসাধারণ কাজ করেছেন কূটনীতিক বিক্রম মিস্রি। তিনি আরও বলেন, যারা এই ঘৃণা ছড়াচ্ছেন তারা কেবল জাতিকে দুর্বল করার কাজ করছেন। "যারা এই সংঘাতের সময় অসাধারণ কাজ করা একজন অসাধারণ পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরিকে ট্রোল করছেন, তারা মানব আবর্জনা। মিসরির মতো শালীন ব্যক্তিরা আমাদের দেশের জন্য কাজ করেন। এই ঘৃণ্য, কাপুরুষোচিত জঘন্য আক্রমণ আমাদের পতনের জন্য যথেষ্ট।"
এনডিটিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ বলেন, মিঃ মিস্রিকে লক্ষ্যবস্তু করা "অত্যন্ত, অত্যন্ত দুঃখজনক"। "আমরা দ্বিধা ছাড়াই বলতে পারি যে মিঃ মিস্রি, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং – এই তিনজন আমাদের দৃঢ় সংকল্প, স্পষ্ট উদ্দেশ্য, এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের অনুভূতির একটি উল্লেখযোগ্য মুখ। দেশে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা উচ্চতর স্তরে নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রতিক সময়ের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য যে কাউকে ট্রোল করবে। আমরা উগ্রপন্থীদের দেশ নই। আমরা এমন একটি দেশ যারা তার অধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিশ্বাসী, বরং এমন একটি দেশ যারা বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী,"
প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা মেনন রাও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিস্রির সমর্থনে বলেন, “ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার বিষয়ে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং তার পরিবারকে ট্রোল করা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একজন নিবেদিতপ্রাণ কূটনীতিক, মিস্রি পেশাদারিত্ব এবং দৃঢ়তার সাথে ভারতের সেবা করেছেন এবং তাঁর নিন্দা করার কোনও কারণ নেই। তার মেয়েকে যৌন নির্যাতন করা এবং তার প্রিয়জনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা শালীনতার প্রতিটি সীমা অতিক্রম করে। এই বিষাক্ত ঘৃণা বন্ধ করা উচিত - আমাদের কূটনীতিকদের পিছনে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, তাদের আক্রমণ করা নয়”।
ভারতীয় আমলাদের এক্স হ্যান্ডেল ব্যুরোক্র্যাটস ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকায় অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে জাতির সেবা করেছেন এমন একজন বিশিষ্ট আইএফএস কর্মকর্তা, বিদেশ সচিব শ্রী বিক্রম মিস্রির প্রতি অসম্মানজনক ও অরুচিকর মন্তব্য প্রত্যক্ষ করা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভারতের আমলারা এই ধরনের অযৌক্তিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন