প্রাক্তন সেনা অফিসার এবং বর্তমান টিভি সঞ্চালক মেজর গৌরব আর্য-র করা এক মন্তব্যের জেরে কূটনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘শুয়ার কা অঊলাদ’ (Son of a Pig) বলেন। যার জেরে নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরানের সংবাদ চ্যানেল ইরান অবজারভার এবং নয়াদিল্লীতে অবস্থিত ইরানের ভারতীয় দূতাবাস ‘ইরান ইন ইন্ডিয়া’।
গত ৮ মে পোষ্ট করা এক ভিডিওতে গৌরব আর্য এই মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন চ্যানেলে প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে মতামত দিয়ে থাকেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এই মন্তব্য নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকেই তিনি করেন। যে অনুষ্ঠানের শীর্ষক ছিল ‘ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, জ্বলছে পাকিস্তান’ (Indian Army is strike back, Pakistan is burning)।
অনুষ্ঠানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে ইরানের জড়িত থাকার তীব্র সমালোচনা করেন গৌরব আর্য। অনুষ্ঠান চলাকালীন ভিডিওতে আরাঘচির মুখ চিহ্নিত করে তাতে 'শুয়োর' (PIG) লেখেন এবং ইরানি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে ভারতের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। যদিও এই সফর পহেলগাঁও হামলার বহু আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
ওই অনুষ্ঠানে ইরানের সাথে পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগের পিছনে ধর্মীয় উদ্দেশ্যের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন গৌরব আর্য। যেখানে তিনি ইঙ্গিত করেন যে, ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে ইরান হস্তক্ষেপ করেছে কারণ “তারা উভয়ই মুসলিম দেশ”। বক্তব্যের সমাপ্তিতে গৌরব আর্য এক উস্কানিমূলক সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, "যখন ইহুদি এবং আমেরিকানরা যৌথভাবে ইরানে তোমাদের উপর আক্রমণ করে, তখন অনুনয় বিনয় করতে এসো না।"
গৌরব আর্য-র এই বক্তব্যের পর নয়াদিল্লিতে ইরানি দূতাবাস এক এক্স হ্যান্ডেল পোষ্টে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, "অতিথিদের প্রতি শ্রদ্ধা করা ইরানি সংস্কৃতিতে একটি দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য। আমরা ইরানিরা আমাদের অতিথিদের 'ঈশ্বরের প্রিয়' বলে মনে করি। তোমার কী হবে?"
ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক বিতর্ক এড়াতে ইরানের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, আর্য একজন ব্যক্তিগত ব্যক্তি এবং তার মতামতের সঙ্গে ভারতের সরকারী অবস্থানের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই বক্তব্যে বলা হয়েছে, "ভারত সরকার ভিডিওতে ব্যবহৃত অসম্মানজনক শব্দকে অনুপযুক্ত বলে মনে করে।"
৮ মে বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ভারতে পৌঁছান। ভারত সফরে থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক করেন। এর আগে ৫ মে তিনি পাকিস্তান সফর করেন এবং পরে দুই দেশকেই "সংযম প্রদর্শনের" আহ্বান জানান। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হানায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর আগেই তাঁর এই সফর নির্ধারিত ছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন